বাংলাদেশে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে নকল ও ভেজাল ওষুধের ব্যবসায়ী চক্র। গ্রাম থেকে শহর—সবখানেই ছড়িয়ে পড়ছে এ মৃত্যুফাঁদ। রোগী, চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্যবিদরা জানাচ্ছেন, এই নকল ওষুধে কাজ না হওয়ার পাশাপাশি অনেকে মৃত্যুর মুখেও পড়ছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নকলের আধিক্য দেখা যাচ্ছে ‘অ্যালবুমিন ইঞ্জেকশন’-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ওষুধেও । চিকিৎসকরা বলছেন, বাজারে এমনভাবে আসল-নকল মিশে গেছে যে তারা নিজেরাও বুঝতে পারছেন না কোনটি আসল।
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. চঞ্চল কুমার ঘোষ বলেন, “নকল অ্যালবুমিন দেখে চেনা প্রায় অসম্ভব। তাই এটি ব্যবহারে আমরা বিরত থাকছি।”
আন্তর্জাতিক সাময়িকী নেচারের এক গবেষণায় ২০২২ সালে জানানো হয়, ঢাকার ১০ শতাংশ অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ই নকল বা নিম্নমানের। ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে এই হার প্রায় ২০ শতাংশ।
ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের ডিন ড. মহিউদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া এ গবেষণার নেতৃত্ব দেন। গবেষণায় দেখা যায়, অনেক ওষুধেই উপাদান হিসেবে ময়দা, আটা এমনকি সুজি ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০২৪ সালের মার্চে ঢাকা ও বরিশালে অভিযান চালিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ ৫ লাখ নকল অ্যান্টিবায়োটিক উদ্ধার করে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. শাহনূর শরমিন বলেন, “ভেজাল ওষুধের ফলে তাৎক্ষণিক রোগ না সারার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। রাসায়নিক উপাদানের প্রতিক্রিয়ায়ও তৈরি হচ্ছে মারাত্মক সমস্যা।” গত বছর ঢাকায় চেতনানাশক ওষুধ ‘হ্যালোথেন’ ব্যবহারে মৃত্যু হয় তিন শিশুর। পরে জানা যায়, সেটিও ছিল ভেজাল। এরপর ওই ওষুধ নিষিদ্ধ করে সরকার।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ভাইস-প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, “কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও সরকারের আন্তরিকতার অভাবে থামছে না নকল ওষুধের দৌরাত্ম্য।”
২০২৩ সালে ‘ওষুধ ও কসমেটিক আইন’ পাস করে নকল ওষুধ উৎপাদনে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়। কিন্তু এখনও কারও বিরুদ্ধে এমন সাজা কার্যকর হয়নি।
বাংলাদেশে বর্তমানে অনুমোদনহীন ফার্মেসি রয়েছে আড়াই লাখেরও বেশি। অনুমোদিত ফার্মেসিগুলোর অনেকে মান ও পরিবেশ অনুসরণ করছে না বলে জানিয়েছেন ড. মহিউদ্দিন। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, “এই অবস্থা জাতীয় স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য একটি বিপর্যয়। অর্থ দিয়ে মৃত্যুর দিকে এগোচ্ছে মানুষ ।”
Leave a comment