Home জাতীয় ভারত জুলাই বিপ্লবকে ষড়যন্ত্র বলায় সমালোচনা
জাতীয়

ভারত জুলাই বিপ্লবকে ষড়যন্ত্র বলায় সমালোচনা

Share
Share

বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লবকে ষড়যন্ত্র হিসেবে তুলে ধরা ছিল ভারতের নিজস্ব ব্যর্থতা আড়াল করার কৌশল—এমন মন্তব্য করেছেন ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়ার–এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সিদ্ধার্থ ভারাদারাজন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই উদ্‌যাপনের ছবি ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বার্তা ছড়িয়ে পড়লেও ভারত সরকার ও তাদের ঘনিষ্ঠ গণমাধ্যম গুজবকে প্রশ্রয় দেয়, যেন আন্তর্জাতিক পরিসরে ঘটনাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা যায়।

শুক্রবার ঢাকায় শুরু হওয়া দুদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন বেঙ্গল ডেলটা কনফারেন্স ২০২৫’–এর বিশেষ এক অধিবেশনে এসব মন্তব্য করেন সিদ্ধার্থ ভারাদারাজন। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ঢাকা ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইটিকস (দায়রা)। আলোচনার বিষয় ছিল মিডিয়া, রিউমার অ্যান্ড ন্যারেটিভ: পোস্ট জুলাই বাংলাদেশ ইন দ্য সাউথ এশিয়ান ফ্রেম’

ভারাদারাজন বলেন, ভারতের নীতিনির্ধারকেরা দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বাস করতেন শেখ হাসিনা ভারতের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ভরসা। মনমোহন সিং থেকে নরেন্দ্র মোদি—সব সরকারই শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার ব্যাপারে তৎপর ছিল। বিনিময়ে শেখ হাসিনা ভারতের শাসক দলের ঘনিষ্ঠ শিল্পগোষ্ঠী, বিশেষ করে আদানি গ্রুপকে নানা সুবিধা দিয়েছেন। কিন্তু এই ঘনিষ্ঠতা শেষ পর্যন্ত ভারতকেও জটিল অবস্থায় ফেলেছে।

তিনি উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনার পতনের প্রথম দিনগুলোতে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ছিল উদ্‌যাপনের ছবি, তবে এক দিনের ব্যবধানেই ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়ে—বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলা চলছে, দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে, গণহত্যা শুরু হয়েছে। ভুয়া ফুটেজ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা–নির্মিত ছবি ব্যবহার করে এসব খবর প্রচারিত হয়। আর ভারত সরকার ইচ্ছাকৃতভাবেই এই মিথ্যা বয়ান চলতে দেয়।

ভারাদারাজনের মতে, এভাবে জুলাই বিপ্লবকে ‘হিন্দুবিরোধী ষড়যন্ত্র’ হিসেবে তুলে ধরা ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও বিভাজন বাড়ানোর কৌশল ছিল। কারও বক্তব্যে পাকিস্তানকে দায়ী করা হলো, আবার কেউ যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত ডিপ স্টেট বা জামায়াতে ইসলামীর নাম টানলেন। এতে একদিকে মোদি সরকারের পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা আড়াল হলো, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক মেরুকরণও গভীরতর হলো।

তিনি সতর্ক করে বলেন, দ্রুত কিন্তু ভুল খবর দেওয়ার চেয়ে দেরিতে হলেও সঠিক খবর দেওয়া অনেক বেশি দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার উদাহরণ। সাংবাদিকদের তথ্য যাচাইকে সর্বাগ্রে রাখতে হবে। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “ভারতের কিছু সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশকে নিরপেক্ষভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। তবে সামগ্রিকভাবে ভারতের গণমাধ্যম বাংলাদেশের প্রতি ইতিবাচক নয়, বরং শত্রুভাবাপন্ন মনোভাবই বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে।”

 

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

কলম্বিয়ায় স্কুল শিক্ষার্থীদের বাস খাদে পড়ে নিহত ১৭

কলম্বিয়ার উত্তরাঞ্চলের একটি গ্রামীণ এলাকায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুল শিক্ষার্থীদের বহনকারী একটি বাস পাহাড়ি খাদে পড়ে অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায়...

পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমে সেনা অভিযান: ১৩ সন্ত্রাসী নিহত

পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ার বান্নু ও মোহমান্দ জেলায় পরিচালিত পৃথক দুইটি সেনা অভিযানে মোট ১৩ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আন্তঃবিভাগীয়...

Related Articles

বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে আশার বার্তা দিলেন ডা. জাহিদ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে আশার...

মোহাম্মদপুরে মা– মেয়েকে হত্যার দায় স্বীকার করল গৃহকর্মী আয়েশা

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা ও মেয়েকে হত্যার আলোচিত মামলায় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি এসেছে। এ...

ওসমান হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক: সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির শারীরিক...

অর্থ উপদেষ্টাকে অবরুদ্ধের ঘটনায় ১৪ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বরখাস্ত

‘সচিবালয় ভাতা’র দাবিতে আন্দোলনের সময় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদকে টানা ছয় ঘণ্টারও...