Home জাতীয় ব্যাংকে ঋণ হিসাবের তুলনায় পাঁচ গুণ বাড়ল আমানত হিসাব
জাতীয়

ব্যাংকে ঋণ হিসাবের তুলনায় পাঁচ গুণ বাড়ল আমানত হিসাব

Share
Share

দেশের ব্যাংক খাতে ঋণগ্রহীতার সংখ্যা যতটা বাড়ছে, আমানতকারীর সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি গতিতে বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে ব্যাংকে নতুন আমানত হিসাব খোলা হয়েছে ২৪ লাখ ৫৯ হাজার ২৮৯টি, যা ওই সময়ের ঋণ হিসাব খোলার চেয়ে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি। একই সময়ে ঋণ হিসাব বেড়েছে মাত্র ৫ লাখ ১৫ হাজার ৪২১টি।

মার্চের শেষে দেশের ৬১টি তফসিলি ব্যাংকে গ্রাহকের মোট হিসাব দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৫৭ লাখ ৬ হাজার ৮২১টি। অন্যদিকে, ঋণ হিসাবের সংখ্যা মাত্র ১ কোটি ৩৪ লাখ ৪৩ হাজার ২৩০টি। এতে স্পষ্ট যে, দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানতকারীর তুলনায় ঋণগ্রহীতার সংখ্যা অপ্রতুল। একটি হিসাব অনুযায়ী, প্রতিটি ঋণ হিসাবের বিপরীতে রয়েছে প্রায় ১২টি আমানত হিসাব।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চের শেষে ব্যাংক খাতে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ২৩ হাজার ৫০৫ কোটি টাকায়, যা ডিসেম্বর শেষে ছিল ১৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। অপরদিকে, একই সময়ে ঋণের পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ১২ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বরে ছিল ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা। তিন মাসে আমানত বেড়েছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা, আর ঋণ বেড়েছে ২৯ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা।

তবে মাথাপিছু হিসাবে দেখা যাচ্ছে, মার্চ শেষে প্রতিটি গ্রাহকের গড় আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৯ টাকা, যা ডিসেম্বরে ছিল ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৯০ টাকা। অন্যদিকে মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ কমেছে। ডিসেম্বরে যা ছিল ১৩ লাখ ১ হাজার ৭৫০ টাকা, মার্চ শেষে তা নেমে এসেছে ১২ লাখ ৭৩ হাজার ৯৬৩ টাকায়। অর্থাৎ ৩ মাসে মাথাপিছু ঋণ কমেছে প্রায় ২৮ হাজার টাকা।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘এমন পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। অধিকাংশ মানুষ ব্যাংকে অর্থ জমা রাখলেও ঋণ পাচ্ছেন গুটিকয়েক মানুষ। এতে অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়ছে এবং ঋণ বিতরণের কাঠামোয় অসাম্য তৈরি হচ্ছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ঋণ ও আমানত উভয় ক্ষেত্রেই নগর ও গ্রামীণ অঞ্চলের মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। মার্চ পর্যন্ত শহরাঞ্চলে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৭৫ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা, যেখানে গ্রামের পরিমাণ মাত্র ১ লাখ ৩৬ হাজার ৭২১ কোটি। শহর থেকে সংগৃহীত আমানতের পরিমাণও অনেক বেশি—১৬ লাখ ২২ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা, যেখানে গ্রামাঞ্চলের আমানত ৩ লাখ ১ হাজার ৩৪৭ কোটি।

গবেষকরা বলছেন, শিল্প ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম শহরকেন্দ্রিক হওয়ায় এবং ব্যাংক শাখার অবস্থানও শহরমুখী হওয়ায় এই বৈষম্য আরও প্রকট হয়েছে। পাশাপাশি, দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ এখনো ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে রয়ে গেছেন, যা আর্থিক অন্তর্ভুক্তির চিত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ বাড়লেও ঋণ বিতরণে সাম্যতা না এলে অর্থনীতি কাঙ্ক্ষিত গতিতে এগোবে না। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে বিনিয়োগ প্রবাহ বাড়ানো না গেলে সার্বিক উন্নয়নে ভারসাম্য আসবে না।

 

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

যমুনায় গোসলে নেমে নিখোঁজ হলেন অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশু 

মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বাচামারা এলাকায় যমুনা নদীতে গোসল করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে অন্তঃসত্ত্বা নারী ও এক শিশু। প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা করেও ফায়ার...

পরবর্তী সরকারের অংশ হওয়ার ইচ্ছা নেই: প্রধান উপদেষ্টা

নির্বাচনের পর গঠিত পরবর্তী সরকারের অংশ হওয়ার কোনো আগ্রহ নেই বলে মন্তব্য প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন। প্রধান উপদেষ্টা জোর...

Related Articles

ইউনূস–তারেক বৈঠক গণতন্ত্রের পথ প্রশস্ত করেছে

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে...

জাল টাকায় সর্বস্ব হারানো সেই গরু বিক্রেতাকে, ওমরাহ হজ করাবেন অপু বিশ্বাস!

নাটোরের সিংড়া উপজেলার বাসিন্দা রইস উদ্দিন, রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি হাটে গরু বিক্রি...

বরিশালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৩ রোগীর  

গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে এক...

রাজধানীতে উদ্ধার হয়েছে ব্যবসায়ীর ৬ টুকরা মরদেহ

পুলিশ রাজধানীর সবুজবাগ এলাকায় নিখোঁজের ৭ দিন পর জাকির হোসেন (৫৫) নামের...