প্রায় দেড় যুগের নির্বাসনের অবসান ঘটিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন শুধু দেশের রাজনীতিতেই নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার তার ঢাকায় ফেরাকে ঘিরে দেশজুড়ে যে রাজনৈতিক আবহ তৈরি হয়েছে, তা গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছে বিশ্বের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমগুলো।
রয়টার্স, এএফপি, আল জাজিরা, এনডিটিভি এবং বিবিসি—সবকটি গণমাধ্যমই এই ঘটনাকে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতার একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স তাদের প্রতিবেদনে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় ১৭ বছর বিদেশে অবস্থানের পর তিনি ঢাকায় ফিরেছেন এবং বিএনপি তাকে সম্ভাব্য শীর্ষ প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে দেখছে। রয়টার্স উল্লেখ করে, দীর্ঘ নির্বাসনের অবসান দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে পারে। পাশাপাশি ঢাকায় লাখো সমর্থকের উপস্থিতি এবং কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়টিও প্রতিবেদনে গুরুত্ব পায়, যা এই প্রত্যাবর্তনের রাজনৈতিক তাৎপর্যকে আরও স্পষ্ট করে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে তুলে ধরে। তাদের প্রতিবেদনে তারেক রহমানকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র হিসেবে
উল্লেখ করার পাশাপাশি ২০০৮ সাল থেকে দীর্ঘ সময়ের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করা হয়। নির্বাসনকালীন সময়, মামলা ও রাজনৈতিক চাপ, এবং দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে জনসমাগম—সব মিলিয়ে এনডিটিভির প্রতিবেদনে একটি বিস্তৃত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে বোঝানো হয়েছে, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন কেবল একটি ব্যক্তিগত ঘটনা নয়; বরং এটি বাংলাদেশের বিরোধী রাজনীতির ধারায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের প্রতিবেদনে তারেক রহমানকে একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের উত্তরসূরি হিসেবে তুলে ধরেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির জন্য এই প্রত্যাবর্তন কৌশলগতভাবে তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে। এএফপি আরও উল্লেখ করে, তার মা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিষয়টি বিএনপির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে একটি সংবেদনশীল প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে। এই বাস্তবতায় তারেক রহমানের দেশে ফেরা দলটির নেতৃত্ব কাঠামো ও রাজনৈতিক পরিকল্পনায় নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরা তার প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির আলোকে এই প্রত্যাবর্তন বিশ্লেষণ করেছে। তাদের প্রতিবেদনে তারেক রহমানের রাজনৈতিক পরিচয়, নির্বাসনের পটভূমি এবং দেশে ফেরার সময়কার রাজনৈতিক পরিবেশ তুলে ধরা হয়। আল জাজিরা মনে করে, দীর্ঘদিন পর একজন শীর্ষ বিরোধী নেতার প্রত্যাবর্তন দেশের রাজনীতিতে উত্তাপ বাড়াতে পারে এবং নির্বাচন-পূর্ব সমীকরণে প্রভাব ফেলতে পারে।
এদিকে বিবিসি বাংলা এই ঘটনাকে সরাসরি লাইভ আপডেটের মাধ্যমে উপস্থাপন করে, যা দেশি পাঠকদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাংলা ভাষাভাষী দর্শকদের মধ্যেও ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করে। বিবিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তারেক রহমানকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা স্বাগত জানান। এই আনুষ্ঠানিকতা দলের ভেতরে তার অবস্থান এবং নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা স্পষ্ট করে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের এই ব্যাপক কাভারেজ প্রমাণ করে যে, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন শুধু একটি দলীয় বা জাতীয় ঘটনা নয়; এটি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতির দৃষ্টিতেও গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন, বিরোধী রাজনীতির পুনর্গঠন এবং ক্ষমতার ভারসাম্য—সবকিছুর সঙ্গেই এই প্রত্যাবর্তন গভীরভাবে যুক্ত। ফলে তারেক রহমানের দেশে ফেরা আগামী দিনে দেশের রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
Leave a comment