ইসলামিক বক্তা আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনান ও তার প্রাক্তন স্ত্রী সাবিকুন নাহার আলাদা হয়েছিলেন মাত্র এক মাস আগে। কিন্তু দ্রুতই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে। দীর্ঘদিনের সম্পর্কে তৈরি হওয়া ভুল বোঝাবুঝি ও মানসিক অস্থিরতা কাটিয়ে তারা আবারো দাম্পত্য জীবনে ফিরে এসেছেন। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) নিজের ব্যক্তিগত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেন সাবিকুন নাহার।
গত ২১ অক্টোবর তাদের আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ ঘটে। তবে সন্তানদের প্রতি ভালোবাসা, পারিবারিক সম্পর্ক তাদের আবারও একত্র করে। সাবিকুন নাহারের ভাষায়, দাম্পত্য জীবনের বিচ্ছেদের পর তারা উপলব্ধি করেছেন—কিছু ভুল বোঝাবুঝি, কিছু আবেগ, এবং বাইরের প্রভাব তাদের সিদ্ধান্তকে জটিল করে তুলেছিল। তিনি লিখেছেন, “দুনিয়াটা ক্ষণস্থায়ী। পুরোদস্তুর ধোঁকা, নিখাঁদ এক প্রতারণা। কতদিনই বা বাঁচব আমরা? অনন্ত পরকালের সাফল্যই তো আসল। সেজন্যই আজ লিখছি—কে কী ভাববে, তাতে আমার আর কিছু যায়-আসে না।”
তাদের দুই সন্তান—আয়িশা ও উসমান—বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারেনি বলে জানান সাবিকুন নাহার। তিনি বলেন, সন্তানদের মানসিক অবস্থা প্রতিনিয়ত তাকে নাড়া দিচ্ছিল। পোস্টে তিনি লেখেন —“আয়িশা প্রতিনিয়ত তার বাবাকে খোঁজে—‘বাবা যাব! বাবা গাড়ি! বাবা কই?’ এসব শব্দের ওজন তোলার মতো কোনো পরিমাপক নেই। উসমানও মাকে পাচ্ছে না। তার চোখে অদ্ভুত প্রশ্ন—তার আম্মুর কাছে নিয়ে যাবে কে?”
পরিবারের ঘনিষ্ঠজনরাও জানান, সন্তানদের মানসিক চাপই উভয়ের সিদ্ধান্ত বদলে দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে।সাবিকুন নাহার স্বীকার করেছেন যে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তটি ছিল আবেগপ্রসূত ও ভুল বোঝাবুঝির ফল। তিনি লেখেন—“উসমানের বাবার প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসা থেকেই কিছু ভুল করেছি, কিছু রাগ ও জেদ দেখিয়েছি। মানুষ বা জিন শয়তান, অথবা বিচ্ছেদের জাদু—কী ছিল, জানি না। তবে আমরা বুঝেছি, এটা আমাদের ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।”তিনি আরও বলেন—“তাকদিরের কাছে বড় বড় মানুষও অসহায় হয়ে যায়। চাঁদের আলো যেমন গ্রহণের সময় নিরূপায় থাকে, তেমনই হয়তো আমরাও ছিলাম। কিন্তু চাঁদ কি কখনো কলঙ্কিত হয়? তেমনি আজও সে আমার চাঁদ।”
সাবিকুন নাহারের এই পোস্ট প্রকাশের পর মুহূর্তেই তা সামাজিক মাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। অনেকেই তাদের পুনর্মিলনকে স্বাগত জানিয়েছেন, বিশেষত সন্তানদের কল্যাণের কথা মাথায় রেখে।ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও অনেক অনুসারী মন্তব্য করেছেন—দাম্পত্য টিকিয়ে রাখা এবং সন্তানদের অধিকার রক্ষার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
পোস্টে আবু ত্বহা বা সাবিকুন নাহার কেউই তাদের পুনরায় বিবাহের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া বা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু বলেননি, তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত বার্তাগুলোর ভাষা ও তাদের পরিবারের বক্তব্য নিশ্চিত করে—তারা এখন আবার একসঙ্গে থাকছেন।
সাবিকুন নাহার তার পোস্টের শেষ লাইনে লেখেন—“উসমান ও আয়িশা তাদের বাবা-মাকে ফিরে পেয়েছে। আল্লাহর প্রতি হাজারো শুকরিয়া।” এই পুনর্মিলনকে অনেকেই একটি ইতিবাচক উদাহরণ হিসেবে দেখছেন—যেখানে ভুল বোঝাবুঝি, আবেগ ও সময়ের চাপ কাটিয়ে মানুষ আবারও সম্পর্ক পুনর্গঠনে সক্ষম হয়। অন্যদিকে, কিছু নেটিজেন মনে করছেন, ব্যক্তিগত জীবন সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করা উচিত নয়। তবে বেশিরভাগই সন্তানের স্বার্থে তাদের পুনরায় একত্রে থাকার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে।
Leave a comment