‘ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী আমরা। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। আমাদেরও পরিবারের জন্য মন কাঁদে। ছোট্ট বাচ্চাদের এত মৃত্যু, কষ্ট দেখে ঘরে বসে থাকতে পারিনি। চলে এসেছি রক্ত দিতে।’
আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সামনে তৃতীয় লিঙ্গের লায়লা কথাগুলো বলছিলেন।
জানতে চাইলে লায়লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘উত্তরার মাইলস্টোনে যারা মারা গেছে কিংবা আহত হয়েছে, তারা আমাদের ভাইবোনের মতো। ছোট বাচ্চাদের এত মৃত্যু, আহত দেখে বসে থাকতে পারিনি ঘরে । তাই বার্ন ইনস্টিটিউটে এসেছি। যদি কারো রক্তের প্রয়োজন হয়, আমরা দেব।’
লায়লার মতো তৃতীয় লিঙ্গের অনেকেই বার্ন ইনস্টিটিউটের সামনে এসেছেন। জানালেন, রাজধানীর মহাখালী, মগবাজার, বনানী, কুড়িল বিশ্বরোডসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন তাঁরা।
জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সামনে বসানো হয়েছে অস্থায়ী রক্ত সংগ্রহের বুথ। সেখানেই ভিড় করছেন তৃতীয় লিঙ্গের এসব মানুষ। রক্তদাতা হিসেবে তালিকায় নিজের নাম, রক্তের গ্রুপ আর মোবাইল নম্বরসহ বিভিন্ন তথ্য দিচ্ছেন।
শান্তি হিজড়া ফাউন্ডেশনের সদস্য মীম বলেন, ‘ওরা তো আমাদেরই সন্তান। আমাদেরই ভাইবোন। আমরা ওদের পাশে দাঁড়াতে চাই। ওদের যদি রক্ত লাগে কিংবা আরও কিছু লাগে, আমরা সবাই সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত।’
যাত্রাবাড়ী এলাকার গুরুমা রোকসানা হাজী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দেশের বিভিন্ন সংকটে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করি। আমার দেশের ছেলেমেয়েরা আজ বিপদে। তাদের রক্ত দিতে আমরা এসেছি। আমাদের কোনো পিছুটান নেই। জনগণই আমাদের পরিবার।’
গতকাল সোমবার বেলা ১টা ৬ মিনিটে রাজধানীর কুর্মিটোলার বিমানবাহিনী ঘাঁটি এ কে খন্দকার থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর এফটি-৭ বিজিআই মডেলের যুদ্ধবিমানটি উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ চত্বরের একটি দোতলা ভবনে বিধ্বস্ত হয়। প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহৃত চীনের তৈরি যুদ্ধবিমানটি ‘যান্ত্রিক ত্রুটির’ কারণে বিধ্বস্ত হয়েছিল।
উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত মোট ৩১ জন নিহত ও ১৬৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
আজ সকাল আটটার পরে রাজধানীর জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী চিকিৎসক মো. সায়েদুর রহমান জানিয়েছেন রক্তের জন্য আছে পর্যাপ্ত ডোনার । তিনি জানান, নেগেটিভ গ্রুপের কিছু রক্ত লাগবে । দগ্ধ শিশুদের জন্য সবার কাছে দোয়া চান সায়েদুর রহমান।
Leave a comment