Home জাতীয় বাংলাদেশ–পাকিস্তান সম্পর্ক: ইতিহাস, বাস্তবতা আর আগামীর সম্ভাবনা
জাতীয়

বাংলাদেশ–পাকিস্তান সম্পর্ক: ইতিহাস, বাস্তবতা আর আগামীর সম্ভাবনা

Share
Share

দীর্ঘ নীরবতার পর আবারও আলোচনার টেবিলে ফিরেছে বাংলাদেশ–পাকিস্তান সম্পর্ক। সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের ঢাকা সফর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক নতুনভাবে উন্মোচনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। সফরকালে বিভিন্ন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা অর্থনীতি, কূটনীতি, সংস্কৃতি ও শিক্ষাক্ষেত্রে সহযোগিতাকে সামনে নিয়ে আসছে।

তবে বাংলাদেশ–পাকিস্তান সম্পর্ক কেবল কূটনৈতিক বা অর্থনৈতিক স্বার্থে সীমাবদ্ধ নয়। এর পেছনে রয়েছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের রক্তক্ষয়ী ইতিহাস, নির্বিচার গণহত্যা, নারী নির্যাতন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের করুণ স্মৃতি। তাই এই সম্পর্কের পুনর্গঠন অতীত ভুলে নয়, বরং ইতিহাসকে সামনে রেখেই এগিয়ে নিতে হবে।

বাংলাদেশ স্পষ্টভাবে তিনটি শর্ত সামনে রেখেছে—প্রথমত মুক্তিযুদ্ধকালীন গণহত্যা ও অপরাধের জন্য পাকিস্তানের নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা, দ্বিতীয়ত ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো ও অর্থনীতির ক্ষতিপূরণ প্রদান, এবং তৃতীয়ত দুই দেশে ছিন্নমূল হয়ে থাকা মানুষদের বিষয়ে টেকসই সমাধান। এসব দাবি শুধু আবেগ নয়, বরং ন্যায়বিচার ও ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতার অংশ।

ইতিহাসে দেখা যায়, যুদ্ধোত্তর সময়েও রাষ্ট্রগুলো পারস্পরিক স্বার্থে সম্পর্ক পুনর্গঠন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র–জাপান কিংবা জার্মানি–ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্ক তার বাস্তব উদাহরণ। বাংলাদেশও একই পথে হাঁটতে চাইলেও জাতীয় স্বার্থ ও জনগণের ঐক্যের প্রশ্নে সতর্ক থাকতে হবে।

অর্থনৈতিক দিক থেকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দেশের বাণিজ্যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। করাচি ও চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি শিপিং লাইন চালু হওয়ায় ট্রানজিট সময় কমেছে, যা ভবিষ্যৎ বাণিজ্যে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। একইসঙ্গে ঢাকা–করাচি ও ঢাকা–লাহোর রুটে সরাসরি বিমান যোগাযোগ চালুর আলোচনাও এগোচ্ছে।

শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়াক্ষেত্রেও সহযোগিতার নতুন সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। দুই দেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমির মধ্যে প্রশিক্ষণ চুক্তি, শিক্ষার্থী বিনিময় কর্মসূচি এবং সংবাদ সংস্থাগুলোর মধ্যে কনটেন্ট সহযোগিতা সম্পর্ককে বহুমাত্রিক করে তুলতে পারে।

তবে একটি বিষয় স্পষ্ট—পাকিস্তানের কাছ থেকে ঐতিহাসিক দায় স্বীকার ও ক্ষমা প্রার্থনার দাবি অমীমাংসিত থাকলে এই সম্পর্ক কখনোই পূর্ণাঙ্গ আস্থা অর্জন করতে পারবে না। একইসঙ্গে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এ ইস্যুকে বিভাজনের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করাও ক্ষতিকর হবে।

ইসহাক দার ও জাম কামাল খানের সাম্প্রতিক সফর নিঃসন্দেহে প্রতীকী ও কৌশলগত গুরুত্ব বহন করে। এখন দেখার বিষয়, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান কতটা দক্ষতার সঙ্গে ইতিহাসের ভার, রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং ভবিষ্যতের স্বার্থকে একত্রে সামঞ্জস্য করতে পারে। অতীতকে স্বীকার করে, বর্তমানকে গুরুত্ব দিয়ে এবং ভবিষ্যতের দিকে নজর রেখেই কেবল সম্পর্কের নতুন অধ্যায় রচিত হতে পারে।

 

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

পুরোনো বিমানবন্দরে ‘এয়ার শো’ দেখতে মানুষের ঢল

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ঢাকার তেজগাঁওয়ের পুরোনো বিমানবন্দরে আয়োজিত বিশেষ ‘এয়ার শো’ দেখতে মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই মানুষের ঢল নেমেছে। উৎসবমুখর পরিবেশে...

বিজয় দিবসকে ঘিরে দেশজুড়ে র‌্যাবের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রস্তুতি

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সারাদেশে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, জনসমাগমস্থল এবং বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত...

Related Articles

সিলেটে তরুণদের বিদেশমুখিতা বাড়ছে, কারণ ….

সিলেটকে বলা হয় ‘দ্বিতীয় লন্ডন’। যুক্তরাজ্যে সিলেটি প্রবাসীদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতির কারণে এই...

ওবায়দুল কাদের ও সাদ্দামসহ ৭ শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি

জুলাই–আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান দমনে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আওয়ামী...

হাদি হত্যাচেষ্টা মামলায় শুটার ফয়সালের বাবা–মায়ের চাঞ্চল্যকর জবানবন্দি

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় নতুন...

পরবর্তী টার্গেট হাসনাত আব্দুল্লাহ ? ভারতীয় সাবেক কর্ণেলের পোস্ট ঘিরে উদ্বেগ

হাদির ওপর হামলার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার টার্গেট করা হয়েছে হাসনাত...