বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি নতুন দল আত্মপ্রকাশ করেছে যার নাম ‘জনতার দল’। অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাবেক নেতা, প্রশাসনের উচ্চপদস্থ সাবেক কর্মকর্তা ও এনজিও কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত দলটির স্লোগান হলো: ‘ইনসাফ জিন্দাবাদ’।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে ‘জনতার দল’। এই দলের নেতৃত্বে রয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম কামাল। তিনি ঘোষণা দেন যে, এই দল বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করবে এবং দুর্নীতিমুক্ত রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করবে। দলটি মধ্যমপন্থী রাজনৈতিক দর্শন অনুসরণ করবে এবং ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ ধারণ করেই সামনে এগিয়ে যাবে।
শামীম কামাল বলেন, “গত ৫৩ বছরের বিতর্কিত রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে আমরা মুক্তি চাই। জনগণের কল্যাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েই আমরা রাজনীতি করতে চাই। এখানে দুর্নীতিগ্রস্ত বা অসৎ ব্যক্তির কোনো ঠাঁই হবে না।” তিনি আরও জানান, যদি কোনো সদস্য দুর্নীতিতে লিপ্ত হন, তাহলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।
জনতার দলের চেয়ারম্যান শামীম কামাল বলেন, “আমাদের রাজনৈতিক দর্শন ফিলিস্তিনের সংগ্রামের মতো। ফিলিস্তিনে মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে নেতা তৈরি করা সম্ভব হয়, ঠিক তেমনভাবেই আমরা দক্ষ, সৎ ও দেশপ্রেমিক নেতাদের গড়ে তুলতে চাই।” তিনি বলেন, “আমরা ঐতিহাসিকভাবে মীমাংসিত বিষয় নিয়ে বিতর্কে যেতে চাই না। আমাদের লক্ষ্য সৎ, সাহসী, শিক্ষিত ও নিষ্ঠাবান মানুষদের নিয়ে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল গঠন করা।”
আরও বলেন, “আমরা দেখেছি, অতীতে সরকার পরিবর্তনের সময় অনেক নেতা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। আমরা দেশবাসীর সামনে একটি স্বচ্ছ ও নীতিনিষ্ঠ নেতৃত্ব উপহার দিতে চাই। আমাদের দেশের মানুষ এখন নীরব ভূমিকা পালন করছে, জাতীয় ঐক্যের অভাব রয়েছে। আমরা সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে চাই।”
জনতার দলের অর্থায়ন প্রসঙ্গে শামীম কামাল জানান, তাদের দলের সকল সদস্য নির্দিষ্ট চাঁদা দেবেন, কিন্তু অননুমোদিত কোনো উৎস থেকে অর্থ নেওয়া হবে না। “আমরা আমাদের দলীয় অ্যাকাউন্ট জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করব, যেন সবাই দেখতে পারেন আমাদের অর্থের উৎস ও ব্যয় কেমন,আমরা প্রচলিত রাজনীতির স্রোতে গা ভাসাবো না, বরং আমরা নতুন পথ তৈরি করব।”
জনতার দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্ট রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, সাবেক মন্ত্রী নাজিম উদ্দীন আল আজাদ, সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক রাজনীতিবিদ আজম খান, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ফজল ইবনে শারেখুজ্জামান, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) সাব্বির আহমেদ, মেজর জেনারেল (অব.) ইসমাইল ফারুক চৌধুরী এবং সাবেক ছাত্রনেতা মাস্তুক হাসান জয়। জনতার দলের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জাতিসংঘে কাজ করা সাবেক সেনা কর্মকর্তা, ভূরাজনীতি ও নিরাপত্তাবিষয়ক লেখক এবং জনপ্রিয় ইউটিউবার ডেল এইচ খান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয় এবং পরে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে আহতদের সম্মাননা দেওয়া হয়। এতে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, এনজিও প্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধা ও অন্যান্য বিশিষ্টজনরা উপস্থিত ছিলেন।
‘জনতার দল’ তার স্বচ্ছতা, নৈতিকতা ও গণমানুষের প্রতিনিধি হয়ে ওঠার অঙ্গীকার নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে পা রেখেছে। দলটির মূলমন্ত্র, কাঠামো এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নতুন এক ধারার রাজনীতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, তারা আদতে কতটুকু সফল হতে পারে এবং জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে কিনা?
Leave a comment