বগুড়ায় গত এক মাসে কারাগারে আটক থাকা অবস্থায় অন্তত চারজন আওয়ামী লীগ নেতা মারা গেছেন। এসব নেতাকে ‘নাশকতা’ ও ‘হত্যা মামলার’ আসামি হিসেবে আটক করা হয়েছিল। কারা কর্তৃপক্ষের দাবি, হৃদরোগ বা অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতার কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে। তবে নিহতদের পরিবার এবং আওয়ামী লীগ এসব মৃত্যুকে ‘পরিকল্পিত’ বলে দাবি করেছে।
সর্বশেষ মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে সোমবার, গাবতলী উপজেলার দুর্গাহাটা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় সহ-সভাপতি আব্দুল মতিন মিঠুর ক্ষেত্রে। কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, কারাগারে বুকে ব্যথা অনুভব করার পর তাকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়, কিন্তু চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
এর আগে, শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ, বগুড়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম রতন, এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদত আলম ঝুনুও কারাগারে আটক অবস্থায় মারা যান।
বগুড়া জেলা কারাগারের সুপার ফারুক আহমেদ জানান, মৃত্যুবরণকারীরা আগে থেকেই বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। তিনি বলেন, “তারা বয়স্ক এবং কারাগারে আসার আগেই অসুস্থ ছিলেন। কারাগারে কোনো অবহেলা হয়নি। অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় হৃদরোগ বা স্ট্রোকের কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে।”
আওয়ামী লীগের নেতারা এসব মৃত্যুকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে দাবি করছেন। দলের বক্তব্য, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে এসব নেতাকে আটক এবং পরে ‘অমানবিক পরিস্থিতিতে’ রাখা হয়েছিল।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) চেয়ারম্যান জেড আই খান পান্না বলেন, “কারাগার বা পুলিশ হেফাজতে যেকোনো মৃত্যুর দায় রাষ্ট্রকে নিতে হবে।” আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত কারাগারে ৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ৩৯ জন বিচারাধীন ছিলেন।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে মামলা এবং গ্রেফতারের ঘটনা বাড়ছে। এ পর্যন্ত দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ‘নাশকতা’ ও ‘হত্যাচেষ্টা’র অভিযোগে ব্যাপক সংখ্যক মামলা হয়েছে।
এই পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে আলোচনা চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি শান্ত করতে এবং মৃত্যুর যথাযথ তদন্ত নিশ্চিত করতে সরকারকে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে।
Leave a comment