গাজায় ইসরায়েলের চলমান সামরিক অভিযান ভয়াবহ মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে। হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত ও আহত হয়েছে, অথচ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ সত্ত্বেও ইসরায়েল তার আক্রমণ বন্ধ করেনি। এই পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনিরা আরব ও ইসলামিক বিশ্বের সক্রিয় হস্তক্ষেপের অপেক্ষায় রয়েছে।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের মাত্রা প্রতিদিন বাড়ছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ৪৯ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং লক্ষাধিক মানুষ আহত হয়েছে। অপরদিকে, গাজার সরকারি গণমাধ্যম অফিসের হিসাব অনুযায়ী, মৃতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও হাজার হাজার মানুষ আটকা পড়ে আছে, যাদের মধ্যে অনেকের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর লাগাতার বোমা হামলা এবং স্থল অভিযান কেবল জানমালের ক্ষতি করেনি, বরং গাজার অবকাঠামোও সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ ও চিকিৎসা সুবিধার অভাবে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস আরব লীগ ও ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যেন তারা অবিলম্বে ইসরায়েলের এই নৃশংস আক্রমণ থামাতে জরুরি পদক্ষেপ নেয়। এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, ‘আমরা আমাদের আরব ও ইসলামি জাতির পাশাপাশি বিশ্বের স্বাধীনচেতা জনগণের প্রতি আহ্বান জানাই, তারা যেন ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী ও তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে চাপ প্রয়োগের জন্য সক্রিয় ভূমিকা রাখে।’
এখন পর্যন্ত আরব ও মুসলিম দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিন্দা প্রকাশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। যদিও কাতার, তুরস্ক ও ইরান কিছু কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়েছে, তবে সমন্বিত পদক্ষেপের অভাবে ইসরায়েলের আগ্রাসন থামানোর জন্য কার্যকর কোনো পরিবর্তন আসেনি।
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ইসরায়েলের হামলা বন্ধের জন্য আহ্বান জানালেও দেশটি এখন পর্যন্ত কোনো চাপের তোয়াক্কা করেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে, যা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ১,১৩৯ ইসরায়েলি নিহত হয়েছিল এবং ২০০-এর বেশি মানুষকে জিম্মি করা হয়েছিল। বর্তমানে বেশ কয়েকজন ইসরায়েলি এখনো হামাসের হাতে বন্দি রয়েছে। ইসরায়েল এই হামলার প্রতিশোধ নিতে গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে, যা সাধারণ জনগণের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে।
বিশ্লেষকদের মতে, শুধুমাত্র কূটনৈতিক নিন্দা জানানো যথেষ্ট নয়। আরব ও মুসলিম দেশগুলো যদি বাস্তব পদক্ষেপ নেয়, যেমন—ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্ন করা, তেল রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা অথবা কূটনৈতিকভাবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা, তাহলে পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে পারে।
ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) এবং আরব লীগের উচিত দ্রুততম সময়ের মধ্যে একত্র হয়ে সামগ্রিক কৌশল নির্ধারণ করা, যাতে ফিলিস্তিনের ওপর এই বর্বর হামলা বন্ধ করা যায়। পাশাপাশি, মুসলিম দেশগুলোর উচিত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ফিলিস্তিনের অধিকার রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠস্বর তৈরি করা।
Leave a comment