নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় সুমন খলিফা (৩৫) নামে এক যুবকের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার (১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফতুল্লা মডেল থানার মধ্যনরসিংপুর এলাকার রাস্তার পাশ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। পরে আইনগত প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
নিহত সুমন খলিফার বাড়ি বরিশালের আগৈলঝড়া উপজেলার আন্দারমানিক গ্রামে। তিনি দ্বিতীয় স্ত্রী সোনিয়াকে নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার মৌচাক এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। দ্বিতীয় স্ত্রী সোনিয়া বিভিন্ন গানের ক্লাবে গান গাইতেন
ফতুল্লা মডেল থানার ওসি (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন জানান, নিহতের স্ত্রী সোনিয়ার বরাতে জানা গেছে- রোববার রাত ১০টার দিকে সুমন ও সোনিয়া সোহেল সরকারের পরিচালিত পঞ্চবটী মেথর খোলা এলাকার একটি গানের ক্লাবে যান। সেখানে রাতভর সোনিয়া ও অন্যান্য শিল্পীরা অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন। ক্লাবে আসার পর থেকে সোনিয়াকে আর সুমনের সাথে দেখা যায়নি।
ভোরে গান শেষ হওয়ার পর সোনিয়া বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিলে স্বামীকে খুঁজে না পেয়ে তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে থানায় আসেন। একই সময় মধ্যনরসিংপুর এলাকায় একটি রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে থাকার বিষয়ে ৯৯৯ এ ফোন আসে। পুলিশ সোনিয়ার কাছে মরদেহের ছবি পাঠালে তিনি তা দেখে সুমনকে শনাক্ত করেন।
ওসি (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন বলেন, “নিহতের মাথার পেছনে, পিঠে ও কোমরের ওপরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হতে পারে।”
তিনি আরও জানান, গানের ক্লাব থেকে বের হয়ে সুমন কীভাবে ঘটনাস্থলে গেলেন এবং তাকে কেন হত্যা করা হয়েছে—তা উদঘাটনে তদন্ত চলছে। সোনিয়া, ক্লাব সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং ঘটনাস্থল সংলগ্ন লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
সোনিয়ার সহযোগী হারমোনিয়াম বাদক ইউনুস সরকার জানান, ভোর সাড়ে ৫টার দিকে গান শেষে তারা মিশুকযোগে বাসায় ফিরছিলেন। চিটাগাং রোডের অক্টো অফিস মোড় এলাকায় পেছন থেকে তিনজন মোটরসাইকেল আরোহী এসে তাদের পথরোধ করে।
ইউনুসের দাবি, ছিনতাইকারীরা চাকু ও চাপাতি দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। তিনি বলেন,“ছিনতাইয়ের পর আমরা থানায় গিয়ে অভিযোগ দেই। তখন সোনিয়া স্বামীর নিখোঁজ থাকার কথাও জানায়। পরে পুলিশ জানায়, একটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।” তবে পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, ছিনতাইয়ের এই ঘটনা এবং সুমনের হত্যাকাণ্ডের মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে কি না, তা নিশ্চিত হতে আরও তদন্ত প্রয়োজন।
পুলিশ জানায়, সুমন খলিফার প্রথম স্ত্রী ইতিও গানের ক্লাবে গান করতেন। সম্পর্কের অবনতি ও বনিবনা না হওয়ায় প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর সুমন দেড় বছর আগে সোনিয়াকে বিয়ে করেন। পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিরোধ বা পূর্বের কোনো বিরোধ এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত কি না, তাও তদন্তের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গানের ক্লাবে রাত কাটানোর পর রহস্যজনকভাবে সুমন খলিফার মৃত্যু ও মরদেহ উদ্ধার—উভয় ঘটনাই স্থানীয়দের মাঝে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ছিনতাই, ব্যক্তিগত বিরোধ নাকি পরিকল্পিত হামলা—এখন সবকিছুই পুলিশের তদন্তের আওতায়।
Leave a comment