পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়নের পুরাতন ভাদুরডাঙ্গীতে নামাজরত অবস্থায় বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে মাদকাসক্ত ছেলে। রোববার (২ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে এই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটে। নিহতের নাম নিজাম প্রামানিক (৬০)। তিনি পেশায় একজন কৃষক ছিলেন।
অভিযুক্ত ছেলে মোস্তফা প্রামানিক (৩০)কেও ঘটনাস্থল থেকে আটক করেছে পুলিশ। জানা গেছে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত নিজাম প্রামানিক প্রতিদিনের মতো সেদিনও স্থানীয় নতুন বাজারে দুধ বিক্রি শেষে সন্ধ্যার পর বাড়ি ফেরেন। খাওয়া-দাওয়া শেষে তিনি বাড়ির বারান্দায় এশার নামাজে দাঁড়ান। নামাজরত অবস্থায় হঠাৎ পেছন দিক থেকে দরজা বন্ধ করে হাতে থাকা হাঁসুয়া দিয়ে একাধিক কোপ দেন তার ছোট ছেলে মোস্তফা। মুহূর্তের মধ্যেই নিজাম প্রামানিক রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
এরপর মোস্তফা পাশের একটি ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে থাকেন। কিছুক্ষণ পর পরিবারের সদস্যরা রক্তের দাগ দেখতে পেয়ে ছুটে গিয়ে ঘরে প্রবেশ করলে দেখতে পান নিজাম প্রামানিকের নিথর দেহ পড়ে আছে। তারা সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়দের সহায়তায় মোস্তফাকে ঘরের ভেতরে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেন।
খবর পেয়ে পাবনা সদর থানার পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে এবং অভিযুক্ত মোস্তফাকে আটক করার চেষ্টা চালায়। তবে আটক অভিযানে মোস্তফা ছুরিকাঘাত করে পুলিশের তিন সদস্যকে আহত করে।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন এসআই আবু বকর সিদ্দিক, এসআই জিয়াউর রহমান ও এসআই আবু রায়হান। এদের মধ্যে এসআই জিয়াউর রহমানকে গুরুতর অবস্থায় সুজানগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে, অন্য দুইজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
নিহতের সেজ ছেলে মিজানুর রহমান বলেন,“আমার বাবা নামাজ পড়ছিলেন, এমন সময় ছোট ভাই দরজা বন্ধ করে কুপিয়ে হত্যা করে। আমরা তখন রুমে ছিলাম। সে আগেও আমাকে আক্রমণ করেছিল এবং বাবার কাছে প্রায়ই মাদকের জন্য টাকা চাইত। না দিলে বাড়িতে ভাঙচুর করত।”
তিনি আরও জানান, ঘটনার দিনও মোস্তফা গামছার ভেতরে হাঁসুয়া লুকিয়ে মিজানুরকে খুঁজছিলেন, কিন্তু পরিবার বুঝে ফেলার পর তাকে সতর্ক করে। পরে সুযোগ বুঝেই বাবা নামাজে দাঁড়ানোর সময় হামলা চালায় সে।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম বলেন,“ঘটনার পর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং অভিযুক্ত মোস্তফা প্রামানিককে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক কলহ ও মাদকাসক্তির কারণেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। ঘটনাস্থল থেকে হত্যার অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে, বিস্তারিত পরে জানানো হবে।”
গ্রামের মানুষ এমন নির্মম ঘটনা দেখে হতবাক। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হালিম বলেন,“নিজাম ভাই খুব শান্ত স্বভাবের মানুষ ছিলেন। প্রতিদিন নামাজ পড়তেন, কারও সঙ্গে কোনো বিরোধ ছিল না।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে পারিবারিক সহিংসতার ঘটনায় মাদকাসক্তির ভূমিকা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, অধিকাংশ পারিবারিক হত্যাকাণ্ড বা সহিংস ঘটনার পেছনে মাদকের প্রভাব অন্যতম কারণ।
এ বিষয়ে সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন,“মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয়, পুরো পরিবার ও সমাজকে ধ্বংস করে। এই ঘটনা তার নির্মম উদাহরণ। মাদকাসক্তদের পুনর্বাসন এবং পরিবারের সচেতনতা এখন সময়ের দাবি।”
Leave a comment