অনলাইন গেম পাবজির প্রভাবে নিজের পরিবারকে হত্যা করা এক কিশোরকে পাকিস্তানের লাহোর সেশন কোর্ট ১০০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) অতিরিক্ত জেলা ও সেশন বিচারক রিয়াজ আহমেদের রায়ে অভিযুক্তকে ৪০ লাখ রুপি জরিমানাও করেছেন।
২০২২ সালের জানুয়ারিতে লাহোরের কাহনা এলাকায় মর্মান্তিক এই ঘটনা ঘটে । অভিযুক্ত কিশোর আলি জাইন (বর্তমান বয়স ১৭) রাত দুইটার দিকে নিজের মা, ভাই এবং দুই বোনের ওপর গুলি চালিয়ে তাদের হত্যা করে। নিহতরা হলেন—লেডি হেলথ ওয়ার্কার নাহিদ মুবারক (৪৫), তার ছেলে তাইমুর সুলতান (২০), কন্যা মাহনূর ফাতিমা (১৫) এবং ছোট মেয়ে জান্নাত (১০)।
ঘটনার পর কাহনা থানায় মামলা দায়ের করা হয় এবং তদন্ত শুরু হয়। পুলিশ এবং প্রসিকিউটর হাবিবুর রহমান সাক্ষী ও প্রমাণ উপস্থাপন করেন। বিচারক রিয়াজ আহমেদ রায়ে বলেন, “অপরাধের ভয়াবহতার কারণে আলি জাইনকে চারটি যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হলো, যা মোট ১০০ বছরের কারাদণ্ডের সমান। তবে আসামির বয়স বিবেচনায় মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে এ সাজা দেওয়া হয়েছে।”
এছাড়া আদালত তাকে ৪০ লাখ রুপি জরিমানাও করেছেন। প্রসিকিউশন দাবি করেছে, আলির বিরুদ্ধে সব প্রমাণ পর্যাপ্ত এবং হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত ও যৌক্তিকভাবে সংঘটিত হয়েছিল।
পুলিশ ও তদন্ত কর্মকর্তা জানান, আলি জাইন জনপ্রিয় অনলাইন গেম পাবজির নেশায় আসক্ত ছিল। দীর্ঘ সময় খেলায় ব্যর্থ হওয়ায় মানসিকভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে পরিবারের ওপর হামলা চালায়। ঘটনার দিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা খেলেও লক্ষ্য পূরণ করতে না পারায় সে মায়ের লাইসেন্সকৃত পিস্তল নিয়ে ঘরে ঢুকে প্রথমে ঘুমন্ত অবস্থায় মাকে হত্যা করে। এরপর দুই বোন এবং বড় ভাইকেও গুলি করে হত্যা করে।
পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “ঘটনার সময় আলি ঘরের ভেতরে একটি কৌশলগত পরিকল্পনা করেছিল। প্রথমে মায়ের ওপর হামলা, তারপর বোন ও ভাই—সবই পরিকল্পিতভাবে করা হয়।” পরে আলি পিস্তলটি নর্দমায় ফেলে দেয় এবং এমন ভান করে যে, সে নিজেই ঘুমিয়ে ছিল।
প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে পুলিশের সন্দেহ ছিল, কারণ আলির আচরণ ঘটনার পর স্বাভাবিক ছিল না। কয়েক দিনের পর্যবেক্ষণ এবং তদন্তের পর তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং আদালতে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড অনলাইন গেমিং আসক্তি এবং কিশোরদের মানসিক চাপের ভয়াবহ প্রভাব তুলে ধরেছে। বিশেষ করে পাবজি-এর মতো গেম দীর্ঘ সময় খেলার ফলে মানসিক উত্তেজনা, রাগ এবং অবসাদ তৈরি হয়।
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, “কিশোরদের গেমের প্রতি আসক্তি মানসিক স্থিতিশীলতা, পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক এবং বাস্তব জ্ঞানকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
Leave a comment