কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় পদ্মা নদীতে ভেসে আসা লিটন (৩০) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সম্প্রতি দৌলতপুরে খড়ের মাঠ দখলকে কেন্দ্র করে দুই সন্ত্রাসী বাহিনীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর তিনি নিখোঁজ হন ।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে ভেড়ামারা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রায়টা ঘোষপাড়া এলাকার পদ্মা নদীর তীরে স্থানীয়রা মরদেহটি ভাসতে দেখে থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠায়।
ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রব তালুকদার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন,“বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রায়টা ঘাট এলাকায় পদ্মা নদীতে ভেসে আসা একটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের নাম লিটন, বয়স প্রায় ৩০ বছর। তিনি রায়টা ঘোষপাড়ার মৃত জামরুল ঘোষের ছেলে। মরদেহ ময়নাতদন্তের পর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
এর আগে সোমবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের পদ্মা নদীর বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের ১৪ হাজার মৌজা এলাকায় খড়ের মাঠ দখল নিয়ে কুখ্যাত কাকন বাহিনী ও রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মন্ডল বাহিনীর মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নদীর নতুন জেগে ওঠা চরাঞ্চলে খড় সংগ্রহ ও জমির দখল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। সোমবার সকাল থেকেই উত্তেজনা চরমে ওঠে এবং কিছুক্ষণ পরই উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মন্ডল বাহিনীর প্রধান মুনতাজ মন্ডলসহ চারজন আহত হন।
ঘটনাস্থলেই মারা যান মিনহাজ মন্ডলের ছেলে আমান মন্ডল (৩৬)। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে শুকুর আলী মন্ডলের ছেলে নাজমুল মন্ডল (২৬) মৃত্যুবরণ করেন।
সংঘর্ষের দিন থেকেই ভেড়ামারা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রায়টা ঘোষপাড়ার লিটন নিখোঁজ ছিলেন। পরিবার ও স্থানীয়রা ধারণা করছিলেন, তিনি গোলাগুলির সময় পদ্মা নদীতে পড়ে গিয়েছেন বা আহত হয়ে কোথাও আশ্রয় নিয়েছেন।
তবে বুধবার সকালে যখন তার মরদেহ পদ্মার পানিতে ভেসে ওঠে, তখন নিশ্চিত হয় সবাই যে তিনিও সংঘর্ষের শিকার হয়েছেন। স্থানীয়দের অনেকে জানিয়েছেন, লিটন খড়ের মাঠে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে গিয়েছিলেন, কোনো বাহিনীর সদস্য ছিলেন না।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন,“লিটন সন্ত্রাসী ছিল না। সে স্রেফ খড় তুলতে গিয়েছিল। কিন্তু গুলির লড়াই শুরু হতেই সবাই ছুটে পালায়, তখন থেকে আর তার খোঁজ পাওয়া যায়নি।”
ঘটনার পর থেকে এলাকাজুড়ে পুলিশ টহল জোরদার করা হয়েছে। দৌলতপুর থানার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কাকন বাহিনী ও মন্ডল বাহিনীর মধ্যে এই সংঘর্ষ দীর্ঘদিনের আধিপত্য বিস্তারের অংশ, যা কয়েকটি গ্রামজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষে ব্যবহৃত অস্ত্র ও গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো কেউ আটক হয়নি, তবে অভিযানের প্রস্তুতি চলছে।
Leave a comment