রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত পথশিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে রহমতউল্লাহ (১২) নামের এক শিশুর মৃত্যুকে ঘিরে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ার পরও দীর্ঘ সময় চিকিৎসা না পাওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে মৃত অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়।
দুই মাস আগে কমলাপুর স্টেশন এলাকা থেকে উদ্ধার করে রহমতউল্লাহকে ওই পুনর্বাসন কেন্দ্রে আনা হয়। তার বাবা মাসুম খান মুগদার মান্ডা এলাকায় রিকশাচালক হিসেবে কাজ করেন। জানা গেছে, রহমতউল্লাহ আগে থেকেই শ্বাসকষ্টে ভুগছিল এবং তার মা–বাবা মাঝে মাঝে তাকে মুগদা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে অক্সিজেন দিতেন।
পুনর্বাসন কেন্দ্রের অন্যান্য শিশুরা জানিয়েছে, গত দুই দিন ধরে রহমতউল্লাহ রাতে ঘুমাতে পারছিল না। সোমবার দিবাগত রাত একটার দিকে তার শ্বাসকষ্ট তীব্র আকার ধারণ করে। শিশুরা তখন আবাসিক স্বাস্থ্যকর্মী সরজিত কুমার বিশ্বাসকে জানায়। তিনি এসে কথা বললেও তৎক্ষণাৎ কোনো চিকিৎসক বা হাসপাতালের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
আজ সকাল ৯টার দিকে রহমতউল্লাহর অবস্থা আরও খারাপ হলে কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক আফরোজা আক্তার ও আবাসিক স্বাস্থ্যকর্মী সরজিতসহ তিনজন মিলে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা জানান, সকাল ১০টায় শিশুটিকে মৃত অবস্থায় আনা হয়। তার মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ জানতে ময়নাতদন্তের প্রয়োজন হবে বলে জানান তাঁরা।
পুনর্বাসন কেন্দ্রের আবাসিক স্বাস্থ্যকর্মী সরজিত কুমার বিশ্বাস দাবি করেন, শিশুটির অবস্থা প্রথমে গুরুতর বলে মনে হয়নি। তিনি বলেন, “রাত ১২টার দিকে ওর সঙ্গে কথা বলেছি। তখন স্বাভাবিকই মনে হয়েছে।” তবে শিশুটি আগে থেকেই শ্বাসকষ্টে ভুগছিল, এ বিষয়ে তিনি অবগত ছিলেন না বলে দাবি করেন।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও পুনর্বাসন কর্মসূচির পরিচালক মো. ফিরোজ উদ্দিন খলিফা জানান, বাথরুমে পড়ে যাওয়ার পর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে বলে শুনেছেন। তবে তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন এবং কোনো অবহেলা হয়েছে কিনা তা তদন্ত করা হবে বলে আশ্বাস দেন। এ সময় তিনি জানান, চিকিৎসাসেবা সহজ করতে একটি কার্যকর নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
পথশিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে ৫৯ জন শিশু রয়েছে। তাদের চিকিৎসা, খাবার ও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সীমিত জনবল থাকলেও জরুরি অবস্থায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতির অভাব রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যে ইঙ্গিত মিলেছে। গত বছরও কমলাপুর পুনর্বাসন কেন্দ্রে অসুস্থ হয়ে আরেক শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। বারবার এমন মৃত্যুর ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে পথশিশুদের চিকিৎসা ও নিরাপত্তা নিয়ে সরকারের দায়িত্ব ও নজরদারির কার্যকারিতা সম্পর্কে।
Leave a comment