বাংলাদেশে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আলোচিত ‘বালিশকাণ্ডের’ মতো নেপালে একটি দুর্নীতি কেলেঙ্কারি উন্মোচিত হয়েছে। এবার পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রকল্পে সরকারি অর্থের অতিরিক্ত ব্যয় ও অনিয়মের অভিযোগে ৫৫ জন ব্যক্তি ও একটি কোম্পানিকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেছে দেশের দুর্নীতি বিরোধী কমিশন (CAC)। মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে পাঁচ সাবেক মন্ত্রী এবং দশ সাবেক সচিবও রয়েছেন।
দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগে বলা হয়েছে, চীনা অর্থায়নে নির্মিত বিমানবন্দর প্রকল্পে প্রায় ৭ কোটি ৪৩ লাখ মার্কিন ডলার (৮৩৬ কোটি নেপালি রুপি) অনিয়মিতভাবে লেনদেন হয়েছে। প্রকল্পের দরপত্র প্রক্রিয়া, ব্যয় নির্ধারণ এবং পরামর্শক নিয়োগেও নানা অনিয়ম ঘটেছে। এই মামলাটি নেপালের বিশেষ আদালতে দাখিল করা হয়েছে, যা নেপালের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুর্নীতি মামলা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
দুর্নীতি বিরোধী কমিশন জানিয়েছে, পোখরা বিমানবন্দর নির্মাণের অনুমোদিত ব্যয় ‘ক্ষতিকর অভিপ্রায়’ নিয়ে কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হয়েছে। কমিশন অভিযোগ করেছে, প্রকল্পের ব্যয় হিসাব ইচ্ছাকৃতভাবে বাড়িয়ে চীনা কোম্পানি চায়না সিএএমসি ইঞ্জিনিয়ারিংকে সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।২০১১ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী বার্ষা মান পুন গোপনে সিএএমসির সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন। এটি পরে সংসদীয় কমিটিতে প্রকাশ হয় এবং প্রকল্প স্থগিত করা হয়।
২০১২ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে দরপত্র প্রক্রিয়া, ব্যয় নির্ধারণ এবং পরামর্শক নিয়োগে নানা অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। চীনা প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রকল্পের প্রাথমিক প্রস্তাব ছিল ৩০ কোটি ৫০ লাখ ডলার, যেখানে নেপাল সরকারের হিসাব অনুযায়ী প্রকৃত ব্যয় ১৬ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। পরে সমালোচনার মুখে প্রকল্পটি ২১ কোটি ৫৯ লাখ ডলারে অনুমোদিত হয়।
অভিযোগপত্রে সাবেক পর্যটনমন্ত্রী পোস্ত বাহাদুর বোগাটি, ভীম প্রসাদ আচার্য, রাম কুমার শ্রেষ্ঠ, দীপক চন্দ্র আমাত্য, সাবেক অর্থমন্ত্রী রাম শরণ মহাত সহ উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। চীনা কোম্পানির পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান ওয়াং বো এবং আঞ্চলিক জেনারেল ম্যানেজার লিউ শেংচেংকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
পোখরা বিমানবন্দর প্রকল্পটি বহু বছর ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতা, গোপন চুক্তি এবং অস্বচ্ছ দরপত্রের কারণে বিতর্কিত ছিল। জমি অধিগ্রহণ ১৯৭৫ সালে হলেও বহুবার পরিকল্পনা সংশোধন এবং স্থবিরতার মধ্য দিয়ে প্রকল্পটি এগিয়েছে।
দুর্নীতি বিরোধী কমিশন দাবি করেছে, প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত অর্থ লেনদেনের জন্য প্রযুক্তিগত সমীক্ষা ইচ্ছাকৃতভাবে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই ‘ভুল প্রতিবেদন’-এ কয়েকজন বিশেষজ্ঞও জড়িত ছিলেন।
নেপালের এই মামলাটি আন্তর্জাতিকভাবে নজরকাড়া দুর্নীতি কেলেঙ্কারির উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ‘বালিশকাণ্ডের’ সঙ্গে তুলনীয়।
Leave a comment