নেপালে টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাওদেলের অবস্থানকে ঘিরে নানা গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। ৯ সেপ্টেম্বর রাতেই কাঠমান্ডুর রাস্তায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খবর আসে, প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করেছেন এবং দেশ রাজতন্ত্রে ফিরে যেতে পারে। এমনকি ভারতের কয়েকটি সংবাদমাধ্যমও এই দাবি প্রচার করেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের কঠোর অবস্থানেই পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়।
কাঠমান্ডুর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কিশোর নেপাল দাবি করেন, সেনাপ্রধান প্রেসিডেন্টকে পদত্যাগ করতে বললেও তিনি দৃঢ়ভাবে তা প্রত্যাখ্যান করেন। বরং প্রেসিডেন্ট সেনাপ্রধানকে বলেন, তাঁকে হত্যা করলেও আন্দোলনকারীদের ঘাড়ে দোষ চাপানো হবে, কিন্তু তিনি পদত্যাগ করবেন না। কিশোরের মতে, প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করলে নেপাল হয় সামরিক শাসন, নয়তো রাজতন্ত্রের দিকে ফিরে যেত। অন্যদিকে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল বিনোজ বস্নেত বলেন, সেনাপ্রধান ও প্রেসিডেন্ট যৌথভাবে সমাধানের পথ খুঁজেছেন এবং দেশকে উত্তাল অবস্থা থেকে বের করে আনতে কাজ করেছেন।
পরিস্থিতি সামাল দিতে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকিকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ করানো হয়। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি ও নীতি–বিশ্লেষকদের মতে, সুশীলাকে সামনে আনার সিদ্ধান্ত ছিল কৌশলগত। এতে রাজতন্ত্রপন্থী শক্তির প্রচেষ্টা ভেস্তে যায়। তবে সুশীলার প্রধানমন্ত্রী হওয়া নিয়ে সাংবিধানিক বিতর্ক উঠেছে, কারণ সংবিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্য নন এমন কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন না। সংসদ ভেঙে দেওয়ার প্রক্রিয়াটিও আইন বিশেষজ্ঞদের মতে অসাংবিধানিক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সি কে লাল মনে করেন, প্রেসিডেন্ট সংসদ ভাঙার দায় নিজের ওপর নিতে চাননি, তাই অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ মেনে তা করেছেন। অন্যদিকে নেপালের প্রভাবশালী সাংবাদিক কনক মণি দীক্ষিত বলেন, রাজতন্ত্র নিয়ে শঙ্কা থাকলেও প্রেসিডেন্টের ভূমিকাই সংকট মোকাবিলায় সবচেয়ে কার্যকর হয়েছে।
তবে প্রশ্ন থেকেই গেছে, ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচনের যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তা কতটা বাস্তবায়নযোগ্য। বড় দলগুলোও এই প্রক্রিয়াকে অসাংবিধানিক বলছে। বিশ্লেষকদের মতে, প্রেসিডেন্ট পাওদেল আপাতত সামরিক শাসন ও রাজতন্ত্র ফেরার পথ রুখে দিলেও নেপালের রাজনৈতিক সংকট এখনো কাটেনি।
Leave a comment