নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায় একটি গুদাম থেকে সাড়ে ১৩ টন এমপি কার্তুজ বা গুলির খোসা উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) রাতে উপজেলার আহম্মেদপুর বাজার এলাকায় আবুল বাশারের মালিকানাধীন ‘শিহাব এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট এজেন্সির গুদামঘরে এ কার্তুজগুলো পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা ছড়িয়ে পড়লেও, পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে—গুলির খোসাগুলো বৈধভাবে ক্রয় করা হয়েছিল এবং তা শিল্পকারখানায় পুনঃব্যবহারের জন্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাতে ট্রাক থেকে মাল নামানোর সময় শ্রমিকরা কার্তুজ সদৃশ বস্তু দেখতে পেয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। খবরটি মুহূর্তেই বাজার ও আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। শনিবার সকালে স্থানীয়রা বিষয়টি পুলিশকে জানান। পরে নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলামসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে গুদামটি পরিদর্শন করেন।
পুলিশ জানায়, উদ্ধার হওয়া গুলির খোসাগুলোর ওজন প্রায় ১৩ দশমিক ৫ টন। এগুলো এমপি কার্তুজের ব্যবহৃত খোসা, যেগুলো অস্ত্রের জন্য কার্যকর নয়। প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব খোসা রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাস থেকে নিলামে বিক্রি করা হয়েছিল।
নাটোরের পুলিশ সুপার (এসপি) তারিকুল ইসলাম বলেন,“খবর পাওয়ার পর আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। গুলির খোসাগুলো সেনানিবাসের নিলাম থেকে নিয়ম মেনে বিক্রি করা হয়েছে। শিহাব এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট এজেন্সির মালিক বৈধ কাগজপত্র দেখিয়েছেন। এতে কোনো আইনি জটিলতা নেই।” তিনি আরও জানান, কার্তুজগুলোর কোনোটিই কার্যকর নয় এবং সেগুলো মূলত পুনঃব্যবহারযোগ্য ধাতব উপাদান হিসেবে বিক্রি করা হয়ে থাকে।
গুদামটির মালিক আবুল বাশার শিহাব বলেন,“গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসের এমপি কার্তুজগুলো নিলামে কিনে নেয় ‘মা-বাবা কনস্ট্রাকশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। পরে আমি তাদের কাছ থেকে বৈধভাবে এগুলো ক্রয় করি। শুক্রবার রাতে ট্রাকবোঝাই করে খোসাগুলো এনে গুদামজাত করি।” তিনি আরও জানান, এসব খোসা গলিয়ে শিল্পকারখানায় ধাতব পণ্য তৈরিতে ব্যবহার করা হবে।
আহম্মেদপুর বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা জানান, গুলির খোসা দেখার পর প্রথমে সবাই ভয় পেয়ে যায়। অনেকে মনে করেছিলেন, হয়তো অবৈধ অস্ত্র বা সামরিক সরঞ্জাম মজুত করা হচ্ছে। তবে পরে পুলিশ এসে বিষয়টি পরিষ্কার করলে আতঙ্ক কেটে যায়। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “প্রথমে আমরা ভয় পেয়ে যাই। পরে পুলিশ এসে জানায় এগুলো ব্যবহারের অযোগ্য পুরনো কার্তুজের খোসা, তখন সবাই নিশ্চিন্ত হয়।”
ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় সেনাবাহিনীর একটি দলও গুদামটি পরিদর্শন করে। সেনা কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেন যে, রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্টে অব্যবহৃত এমপি কার্তুজ নিয়মিত নিলামে বিক্রি করা হয় এবং এগুলোর বাণিজ্যিক ব্যবহার বৈধ।
পুলিশ জানায়, শিহাব এক্সপোর্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র—নিলাম দলিল, পরিবহন অনুমতিপত্র এবং গ্রহণ সনদ—দেখিয়েছে। ফলে এটি আইনত বৈধ ব্যবসায়িক কার্যক্রম হিসেবে গণ্য হচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের ভারী সামরিক উপাদান পরিবহনের আগে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করার পরামর্শ দিয়েছে জেলা পুলিশ।
Leave a comment