কানাডা সরকার দেশের নাগরিকত্ব আইনে দীর্ঘদিন ধরে চলমান বৈষম্য ও সীমাবদ্ধতা দূর করতে বড় ধরনের পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে। ‘বিল সি-৩’ নামে আলোচিত নতুন সংশোধনী কার্যকর হলে বিদেশে জন্ম নেওয়া হাজার হাজার কানাডীয় বংশোদ্ভূত পরিবার উপকৃত হবে। বহু বছর ধরে চলতে থাকা নাগরিকত্ব সংকট, বিশেষ করে ‘দ্বিতীয় প্রজন্মের কাট-অফ’ সমস্যার সমাধান করবে এই আইন।
যদিও বিলটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়নি, তবে রাজকীয় অনুমোদন পাওয়ায় এটি পরিষ্কার যে অটোয়া দ্রুতই কার্যকরির তারিখ নির্ধারণে এগোতে চায়। আইনটি মন্ত্রিসভার চূড়ান্ত অনুমোদন পেলেই বাস্তবায়ন শুরু হবে।
২০০৯ সালে চালু হওয়া বংশগত নাগরিকত্বের ‘প্রথম প্রজন্ম সীমা’ অনুযায়ী, বিদেশে জন্ম নেওয়া কোনো কানাডীয় নাগরিক যদি নিজের সন্তানকেও বিদেশেই জন্ম দেন, তবে সেই সন্তান স্বয়ংক্রিয়ভাবে কানাডীয় নাগরিক হিসেবে গণ্য হতো না। এই নিয়ম বহু পরিবারকে নাগরিকত্বহীনতার ঝুঁকিতে ফেলেছিল এবং ‘Lost Canadians’ নামে পরিচিত একটি বড় জনগোষ্ঠী তৈরি হয়েছিল—যারা জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য হলেও পুরনো আইনের কারণে সেই অধিকার হারিয়েছিল।
আইআরসিসি (ইমিগ্রেশন, রিফিউজি অ্যান্ড সিটিজেনশিপ কানাডা) জানায়, ২০০৯ সালের এই সীমাবদ্ধতার কারণে শত শত পরিবারের নাগরিকত্ব স্বীকৃতি জটিল হয়ে পড়ে। অনেকেই জানতেনই না যে তারা আইনি সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর, অন্টারিও সুপিরিয়র কোর্ট অফ জাস্টিস এক ঐতিহাসিক রায়ে জানায়—বংশগত নাগরিকত্বের প্রজন্ম-সীমা অসাংবিধানিক এবং এটি মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। আদালত আইন সংশোধনের জন্য সরকারকে সময় বেঁধে দেয়। পরে বাস্তবায়নের শেষ সময়সীমা বাড়িয়ে ২০২৬ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।
এই রায়ের ভিত্তিতেই বিল সি-৩ সংসদে উপস্থাপন করা হয়।
বিল সি-৩ মূলত দুটি বড় সমস্যার সমাধান করছে—পুরনো আইনের কারণে যে কানাডীয় নাগরিকরা বংশগত অধিকার হারিয়েছিলেন বা সন্তানদের নাগরিকত্ব দিতে পারেননি, তারা নতুন আইনে সেই অধিকার ফিরে পাবেন। বিদেশে বসবাসরত কানাডীয় বাবা-মা যদি কানাডার সঙ্গে উল্লেখযোগ্য সংযোগ (Significant Connection) প্রমাণ করতে পারেন, তবে বিদেশে জন্ম নেওয়া তাদের সন্তানও স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব পাবে।
এই উল্লেখযোগ্য সংযোগ বলতে বোঝানো হয়েছে—জন্ম বা দত্তকের আগে অন্তত ১,০৯৫ দিন (৩ বছর) বাবা-মায়ের কানাডায় বসবাসের রেকর্ড।
অভিবাসন আইনজীবীরা বলছেন, এই নিয়ম কানাডীয় পরিচয়ের প্রতি সম্মান রেখে একই সঙ্গে বিদেশে জন্ম নেওয়া পরিবারগুলোর অধিকারও নিশ্চিত করেছে। কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন ল’য়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (CILA) সংসদের স্থায়ী কমিটিতে বিলটির প্রতি জোরালো সমর্থন জানিয়েছে। তাদের মতে, এই বিল দীর্ঘদিনের একটি ‘অন্যায়’ পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে চলেছে।সংস্থাটি জানায়—“এটি এমন একটি আইন, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে কানাডীয় পরিবারগুলোর নাগরিকত্ব-ভিত্তিক বৈষম্য দূর করবে।”
আইআরসিসির কর্মকর্তা ও আইনজীবীরা মনে করছেন, বিল কার্যকর হলে আবেদনপত্রের সংখ্যা দ্রুত বাড়বে। বিদেশে থাকা কানাডীয়দের মধ্যে ইতিমধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা গেছে।
এই আইন কার্যকর হলে—কানাডীয় ডায়াস্পোরার হাজারো সন্তান নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে পারবে’ ,বহু ‘Lost Canadians’ পুনরায় নাগরিকত্ব ফিরে পাবে ,পরিবারগুলোর আইনগত অনিশ্চয়তা দূর হবে, কানাডা তার অভিবাসন নীতিকে আরও মানবিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করবে। অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পরিবর্তন কানাডার নাগরিকত্ব নীতিতে এক ‘ঐতিহাসিক মোড়’ এনে দেবে।
Leave a comment