Home Uncategorized নস্টালজিয়া: একটা রোগ যা মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে
Uncategorized

নস্টালজিয়া: একটা রোগ যা মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে

Share
Share

এক সময় যে ‘নস্টালজিয়া’ ছিল প্রাণঘাতী রোগ হিসেবে চিহ্নিত, সেটিই আজ একটি গভীর আবেগের নাম। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এর অর্থ ও প্রভাব বদলেছে। অতীতে এটি এক ধরনের মানসিক ও শারীরিক রোগ হিসেবে বিবেচিত হলেও বর্তমানে এটি মানুষের আবেগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে।
নস্টালজিয়া শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ ‘নস্টোস’ (বাড়িতে ফেরা) এবং ‘অ্যালগোস’ (ব্যথা) থেকে। ১৬৮৮ সালে সুইস চিকিৎসক জোহানেস হোফার প্রথমবারের মতো এটি রোগ হিসেবে চিহ্নিত করেন।
প্রথমদিকে মনে করা হতো, এটি এমন এক মানসিক ব্যাধি, যা দীর্ঘদিন বাড়ি থেকে দূরে থাকা মানুষের মধ্যে দেখা যেত। বিশেষ করে সুইস সেনাদের মধ্যে এটি ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা যায়। তাদের মধ্যে বিষণ্নতা, বিভ্রান্তি, ক্ষুধামন্দা, হৃদস্পন্দনের পরিবর্তন এবং এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটত বলে ধারণা করা হতো।
সুইজারল্যান্ডের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এতটাই মনোমুগ্ধকর ছিল যে, দেশটির বাইরে থাকলে শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা দেখা দিত বলে বিশ্বাস করা হতো। তাই এটিকে একসময় ‘সুইস রোগ’ বলেও আখ্যা দেওয়া হয়েছিল।
নস্টালজিয়া প্রথমে ইউরোপে এবং পরে উত্তর আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে। ১৮শ ও ১৯শ শতাব্দীতে ইংল্যান্ড ও আমেরিকার সেনাদের মধ্যে এটি ব্যাপকভাবে দেখা দিত। এমনকি আমেরিকান গৃহযুদ্ধের সময়ও এটি মৃত্যুর অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল।
একজন ব্রিটিশ চিকিৎসক রবার্ট হ্যামিল্টন ১৭৮১ সালে এক সৈনিকের কাহিনি তুলে ধরেন, যিনি নস্টালজিয়ার কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। বাড়ি ফেরার প্রতিশ্রুতি পেয়ে তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন, যা এই রোগের মানসিক প্রভাবের ইঙ্গিত দেয়।
বিশ শতকের শুরুতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে নস্টালজিয়াকে রোগ হিসেবে গণ্য করার প্রবণতা কমতে থাকে। ধীরে ধীরে এটি মানসিক ব্যাধির পরিবর্তে আবেগ হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দেশপ্রেমের সঙ্গে নস্টালজিয়ার যোগসূত্র স্থাপন করা হলেও পরবর্তী সময়ে এটি আরও ব্যক্তিগত ও মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা হয়।
বর্তমানে মনোবিজ্ঞানীরা নস্টালজিয়াকে মানুষের সুখস্মৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত আবেগ হিসেবে বিবেচনা করেন, যা অতীতের সুখকর মুহূর্তগুলোর প্রতিফলন ঘটায়। যদিও এটি কিছু ক্ষেত্রে হতাশা ও বিষণ্নতার কারণ হতে পারে, তবে এটি ইতিবাচক অনুভূতির উৎস হিসেবেও কাজ করে।
আজকের বিশ্বে নস্টালজিয়া শুধু ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণের বিষয় নয়, এটি রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ব্রেক্সিট কিংবা ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ স্লোগানের মতো ঘটনাগুলো নস্টালজিয়ার রাজনৈতিক ব্যবহারের উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, নস্টালজিয়া মানুষকে অতীতের এক সুন্দর ও সরল সময়ের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যায়, যদিও বাস্তবে সেই অতীত হয়তো অতটা নিখুঁত ছিল না। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও নস্টালজিয়ার প্রভাব স্পষ্ট। পুরোনো সিনেমা, গান, ফ্যাশন এমনকি খাবারের জনপ্রিয়তা বাড়ছে নস্টালজিয়ার কারণে।
নস্টালজিয়াকে এখন আর রোগ হিসেবে দেখা হয় না, বরং এটি মানুষের আবেগ ও মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে অতীতের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি বর্তমান ও ভবিষ্যৎকে উপেক্ষা করার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই নস্টালজিয়াকে ইতিবাচক আবেগ হিসেবে গ্রহণ করাই হতে পারে সর্বোত্তম উপায়।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

গাজায় জিম্মি দুই ইসরায়েলির ভিডিও প্রকাশ

উপত্যকার শাসক দল “হামাস” গাজায় জিম্মি দুই ইসরায়েলি বন্দির ভিডিও প্রকাশ করেছে । এলকানা বোহবোট (৩৫) এবং ইউসুফ-হাইম ওহানা (২৪) নামের দুজনকেই ২০২৩...

‘চলচ্চিত্রের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিন’— সিয়াম

ঢাকাই সিনেমার জন্য মন্দা সময় যাচ্ছে দীর্ঘ বছর ধরেই । সিনেমা হলগুলো দিনে দিনে একটির পর একটি বন্ধ হচ্ছে ।যেমনটা কমে যাচ্ছে প্রযোজক,...

Related Articles

ইশরাক মেয়র, এবার এমপি পদ চান হিরো আলম

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে আদালতের রায়ে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি নেতা...

‘চলচ্চিত্রের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিন’— সিয়াম

ঢাকাই সিনেমার জন্য মন্দা সময় যাচ্ছে দীর্ঘ বছর ধরেই । সিনেমা হলগুলো...

ইউনূস-জিনপিং বৈঠক ২৮ মার্চ, আলোচনায় থাকতে পারে যেসব বিষয়

বিশ্লেষকরা প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন ।  বিশেষত,...

তামিমের জন্য আপনার দোয়াই হবে, আমার জন্মদিনের সেরা উপহার : সাকিব আল হাসান

ক্রিকেটের মাঠে দীর্ঘদিন বন্ধুত্বের বন্ধন বজায় রেখে এগিয়ে চলা। সাকিব আল হাসান...