অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই ঘোষণাপত্রে ‘সংস্কারকৃত সংবিধান’ শব্দ ব্যবহার করে নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবিকে পাশ কাটিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। শনিবার বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণপরিষদ নির্বাচন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এই অভিযোগ করেন।
আখতার হোসেন বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র একটি অপূর্ণাঙ্গ নথি। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী নির্বাচনের পর সংস্কারকৃত সংবিধানের তফসিলে এই ঘোষণাপত্র সংযুক্ত হবে। কিন্তু সংস্কারের বিষয়গুলো কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, সেই প্রশ্নে সুনির্দিষ্ট কিছু পাওয়া যায়নি। বরং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ইউনূস ঘোষণায় ‘সংস্কারকৃত সংবিধান’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করে গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবিকে এড়িয়ে গেছেন।
তিনি বলেন, সংবিধান ইতিমধ্যে বহুবার কাটাছেঁড়া ও সংশোধনের মধ্য দিয়ে গেছে, যার অনেকগুলো আদালত বাতিল করেছেন। রাজনৈতিক ঐকমত্যের যে সিদ্ধান্তগুলো ঐকমত্য কমিশন দিয়েছে, সেগুলোকে টেকসইভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে নতুন সংবিধান ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। বিদ্যমান সংবিধানের কাঠামো ধরে রেখে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্তের মুখোমুখি দাঁড় করানোর জন্য শহীদরা জীবন দেননি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এনসিপির প্রস্তাব অনুযায়ী, নির্বাচিত প্রতিনিধিরা একই সঙ্গে সংসদ সদস্য ও গণপরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁরা নতুন সংবিধান প্রণয়ন করবেন এবং সরকারও পরিচালনা করবেন। নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে সরকারের ফেব্রুয়ারির প্রস্তাবিত সময়সীমা নিয়ে তাঁদের আপত্তি নেই, তবে নির্বাচন যেন পুরোনো ব্যবস্থাকে ধরে রাখার নির্বাচন না হয়, সে আহ্বান জানান আখতার হোসেন।
সভায় দলের মুখ্য সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনের একমাত্র সমাধান হলো গণপরিষদ নির্বাচন। নতুন সংবিধান ছাড়া স্থিতিশীল রাষ্ট্র গড়ে তোলা সম্ভব নয় এবং জনগণের রক্তের ত্যাগের প্রতি প্রকৃত সম্মান জানানোও অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানও সামরিক ফরমান জারি করে গণপরিষদের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছিলেন। তাহলে আজ গণপরিষদের প্রসঙ্গ উঠলেই কেন আপত্তি তোলা হচ্ছে, সেই প্রশ্ন রাখেন তিনি।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর মতে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য কমিশন কার্যত দিশাহারা। গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমেই সনদের সংস্কারগুলো কার্যকর করা সম্ভব। এনসিপি নেতাদের মতে, এই পথেই বাংলাদেশকে নতুন রাজনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো যাবে।
Leave a comment