নড়াইলের লোহাগড়া পৌরসভায় একটি বসত ঘর থেকে মো. ইমরুল ভূঁইয়া (৩৭) নামের এক যুবকের গলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে পৌরসভার কুন্দশী গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাটি স্থানীয় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইমরুল ভূঁইয়া দীর্ঘদিন ধরে ওই বাড়িতেই একা বসবাস করতেন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো ছিল না। একই সঙ্গে তার স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহজনিত বিরোধ নিয়ে প্রায় এক বছর ধরে মামলা চলছিল। পারিবারিক টানাপোড়েনের মধ্যেই তিনি একাকী জীবনযাপন করছিলেন।
বুধবার দুপুরে বাড়ির আশপাশে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবেশীরা সন্দিহান হয়ে ওঠেন। পরে তারা বাড়ির ভেতরে গিয়ে দেখতে পান, ঘরের মেঝেতে গলিত অবস্থায় পড়ে আছে ইমরুলের নিথর দেহ। দৃশ্যটি দেখে আতঙ্কিত প্রত্যক্ষদর্শীরা দ্রুত বিষয়টি স্থানীয় পুলিশকে জানান।
খবর পেয়ে লোহাগড়া থানা পুলিশের একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ঘরটি পরিদর্শন করে এবং মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কয়েক দিন আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। ঘরটি বন্ধ থাকায় এবং তার স্বাভাবিক চলাফেরা না থাকায় বিষয়টি কারও নজরে আসেনি।
লোহাগড়া থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) অজিত কুমার রায় বলেন, “মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নড়াইল জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট হাতে এলে মৃত্যুর প্রকৃতি ও কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। এ ঘটনায় আইনগত প্রক্রিয়া চলছে এবং প্রয়োজনীয় তদন্ত শুরু করা হয়েছে।”
প্রতিবেশীরা মনে করেন, দুর্গন্ধ না ছড়ালে ঘটনা আরও কয়েক দিন অজানা থেকে যেতে পারত। তারা জানান, ইমরুলের ঘরটি দুপুরের দিকে বাইরে থেকে অস্বাভাবিকভাবে চুপচাপ মনে হচ্ছিল। পরে তীব্র গন্ধ লক্ষ্য করে কয়েকজন ভেতরে উঁকি দিয়ে মৃতদেহ আবিষ্কার করেন।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ ঘটনাস্থলে ভিড় করেন এবং ঘটনার সঠিক তদন্ত দাবি করেন। তারা বলেন, ইমরুলের মৃত্যু যদি স্বাভাবিক না হয়, তবে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পুলিশ বলেছে, আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ, মোবাইল ফোন রেকর্ডসহ অন্যান্য প্রযুক্তিগত তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে। তার বাড়ির ভেতর কোনো জিনিসপত্র এলোমেলো ছিল কি না, কোনো জোরপূর্বক প্রবেশের চিহ্ন আছে কি না—এসব বিষয়ও বিশদভাবে পরীক্ষা করা হবে।
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া মাত্রই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তারা আশা করছে, রিপোর্টের ভিত্তিতে মৃত্যুর প্রকৃতি এবং সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।
ইমরুল ভূঁইয়ার মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবার এখনও কোনো মন্তব্য করেনি। তবে পুলিশ জানায়, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা চলছে এবং প্রয়োজন হলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ঘটনাটি তদন্তাধীন রয়েছে এবং ময়নাতদন্তের ফল পাওয়ার পরই মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন হবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
Leave a comment