বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ফুল দিতে গিয়ে আটক হওয়া রিকশাচালক আজিজুর রহমানকে হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালত কারাগারে পাঠিয়েছেন। শনিবার দুপুরে তাঁকে আদালতে হাজির করা হলে ঢাকা মহানগর হাকিম ইসরাত জেনিফার জেরিন শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সকালে জাতীয় শোক দিবসে ফুল নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে গেলে আজিজুরকে কয়েকজন যুবক ধরে মারধর করেন। পরে পুলিশ এসে তাঁকে থানা হেফাজতে নিয়ে যায়। পরদিন শনিবার ধানমন্ডি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে জানান, গত বছরের ৪ আগস্ট ঢাকার সায়েন্স ল্যাব এলাকায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশের নেতৃত্বে ছাত্র–জনতার ওপর সশস্ত্র হামলার ঘটনায় আজিজুরের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আরিফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি গুরুতর আহত হন এবং দীর্ঘ দুই মাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ওই ঘটনার মামলায়ই আজিজুরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এসআই আদালতকে জানান, প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি ও বাদীর সাক্ষ্য–প্রমাণে আজিজুরের সম্পৃক্ততা উঠে এসেছে। মামলার তদন্তের স্বার্থে তাঁকে কারাগারে আটক রাখা জরুরি। আদালতও এই আবেদনের ভিত্তিতে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ধানমন্ডি এলাকায় স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজিজুর পেশায় রিকশাচালক হলেও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতেন। শুক্রবার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে তাঁর উপস্থিতি নিয়েও নানা গুঞ্জন চলছে। একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী বলছেন, তিনি শুধু ফুল দিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে পড়ে তাঁকে আটকের ঘটনা ঘটে।
আজিজুরের পরিবারের দাবি, তাঁকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জড়ানো হয়েছে। এক আত্মীয় নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আজিজুর প্রতিদিন রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। তিনি রাজনৈতিক কর্মী নন। এখন তাঁকে বড় মামলায় জড়িয়ে দেওয়ায় আমরা ভয় পাচ্ছি।”
১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে সারাদিনই ছিল কড়া নিরাপত্তা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মী, মুক্তিযোদ্ধা, সাধারণ মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। কিন্তু এদিন কয়েকজনকে সন্দেহভাজন মনে করে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। এর মধ্যে আজিজুর রহমানকে কারাগারে পাঠানো হলো।
মামলার বাদী আরিফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, “আমি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর দীর্ঘ সময় মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করেছি। আজিজুরের সম্পৃক্ততার প্রমাণ আমি নিজ চোখে দেখেছি। আদালত এখন এর বিচার করবেন।”
পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “রাজধানীতে জুলাই মাসের গণ–অভ্যুত্থানের ঘটনায় বহু হামলার অভিযোগ এসেছে। যেসব ব্যক্তি সরাসরি হামলায় অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। আজিজুর তাঁদের একজন। আইন অনুযায়ীই সব কিছু হচ্ছে।”
আজিজুরকে ধানমন্ডি থানার হাজত থেকে কড়া পাহারায় কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহে তাঁর জামিন শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আদালত–সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।
Leave a comment