ঝালকাঠি শহরের পরিচিত ‘মিতু’ সিনেমা হল আজকের দিনে পরিণত হয়েছে একটি মসজিদে, যেখানে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা হয়। স্থানীয়দের কাছে এটি এখন ‘কায়েদ মহল’ নামে পরিচিত । এটি স্থানীয়দের কাছে আধ্যাত্মিক শান্তি ও একতাবদ্ধতার একটি কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশের অনেক পুরনো সিনেমা হল রয়েছে যেগুলো এক সময় সমাজের বিনোদনের কেন্দ্র ছিল। তবে বর্তমানে অনেক সিনেমা হলের উদ্দেশ্য পরিবর্তিত হয়েছে এবং কিছু স্থান ধর্মীয় কার্যক্রমের কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হয়েছে। ঝালকাঠির ‘মিতু’ সিনেমা হল এমন একটি উদাহরণ, যা এক সময় ছিল পূর্ণদৈর্ঘ্য ছায়াছবির প্রদর্শনীর স্থান, কিন্তু এখন এটি একটি শান্তিপূর্ণ মসজিদে পরিণত হয়েছে, যেখানে মুসল্লিরা প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন।
ঝালকাঠি শহরের কালিবাড়ি রোডের আমতলা মোড়ে অবস্থিত ‘মিতু’ সিনেমা হলটি একসময় শহরের অন্যতম জনপ্রিয় সিনেমা হল ছিল। সৈয়দ জিয়াউল হক আবু জাহিদ এটি চালু করেছিলেন, এবং শহরের অন্যান্য সিনেমা হলগুলোর মধ্যে এটি ছিল বেশ দীর্ঘকাল ধরে চলমান। তবে শেষের দিকে, সিনেমা হলটিতে কুরুচিপূর্ণ এবং অশ্লীল ছবি প্রদর্শন করা হতো, যা স্থানীয়দের জন্য হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
এসব পোস্টারে ছেয়ে যেত শহরের দেয়াল। এসব দেখে হতাশা প্রকাশ করছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম, ঝালকাঠি এনএস কামিল মাদরাসা ও ইসলামি কমপ্লেক্সের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আযিযুর রহমান নেছারাবাদী (কায়েদ সাহেব) হুজুর। তিনি একদিন বললেন, ‘এই জায়গাটা এক সময়ে নামাজের স্থান হবে। এখান থেকে ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনিতে মানুষকে নামাজে ডাকা হবে।’ দেড় যুগ পরে সেই কথা বাস্তবে রূপ নিয়েছে এখন।
২০১১ সালের পৌর নির্বাচনের সময় মিতু সিনেমা হলটি বন্ধ হয়ে যায়। এর মালিক, সৈয়দ জিয়াউল হক, হলটি বিক্রি করে দেন। পরে, এটি পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হোসেনের হাতে আসে। তিনি প্রথমে এই ভবনটি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করেন এবং ব্যবসার উদ্দেশ্যে এটি সংস্কার করেন।
কায়েদ সাহেব হুজুরের একমাত্র সাহেবজাদা আরিরুল মুছলিহি মাওলানা মুহা. খলিলুর রহমান নেছারাবাদী মাহবুব হোসেনের কাছ থেকে ভবনসহ জমিটি কেনেন। স্থাপনার অবকাঠামো পরিবর্তন করে সেখানে একটি খানকাহ স্থাপন করেন তিনি। যার নাম দেয়া হয় ‘কায়েদ মহল’। বর্তমানে এখানে জামায়াতের সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়, জিকির-আজকারের পাশাপাশি সাপ্তাহিক ও মাসিক তালিমি জলসা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
নেছারাবাদের কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট শাহনেওয়াজ লাভু জানান , কায়েদ সাহেব হুজুর ছিলেন এক অত্যন্ত আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব। তিনি বহুবার আল্লাহ প্রদত্ত কারামতি প্রদর্শন করতেন। একদিন ঝালকাঠি শহরে প্রবেশ করার সময়, মিতু সিনেমা হলের সামনে অশ্লীল পোস্টার দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তখন তিনি আধ্যাত্মিক অবস্থায় বলেছিলেন, “একসময়ে এখানে নামাজ হবে।” তাঁর এই কথা সত্যি হয়ে উঠেছে, যা আল্লাহর ইচ্ছায় বাস্তবায়িত হয়েছে।
আদর্শ সমাজ বাস্তবায়ন পরিষদের মহাসচিব ডা. মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ খান বলেন, “কায়েদ সাহেব হুজুরের আধ্যাত্মিকতা ছিল দল-মত, ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে। তার আধ্যাত্মিকতায় অন্য ধর্মের মানুষও তাকে শ্রদ্ধা করতেন। আজ যেখানে সিনেমা হল ছিল, সেখানে এখন আল্লাহু আকবার ধ্বনি উচ্চারিত হচ্ছে, নামাজ আদায় হচ্ছে, যা তার একমাত্র ছেলে নেছারাবাদী হুজুরের দক্ষতায় সম্ভব হয়েছে।”
এটি একটি আশ্চর্যজনক পরিবর্তন, যেখানে এক সময়ের বিনোদন কেন্দ্র আজ ধর্মীয় শান্তির কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। বর্তমান সময়ে, কায়েদ মহলটি ধর্মীয় সমাবেশ, আধ্যাত্মিক আলোচনা এবং প্রার্থনার স্থান হয়ে উঠেছে, যা স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য এক অপূর্ব আশীর্বাদ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
Leave a comment