মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ( সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ) সংবাদ সম্মেলনে ‘জুলাই অভ্যুত্থানের অবমাননাকর’ প্রশ্ন করার জেরে দুটি টেলিভিশন চ্যানেলের তিনজন সাংবাদিক চাকরিচ্যুত হয়েছেন।
এর মধ্যে বেসরকারি টিভি চ্যানেল দীপ্ত টিভির দুইজন এবং এটিএন বাংলার একজন সাংবাদিক রয়েছেন। দীপ্ত টিভির সংবাদ সম্প্রচার সাময়িক স্থগিত রয়েছে। কিন্তু কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। এছাড়া চ্যানেল আই কর্তৃপক্ষ তাদের একজন সাংবাদিককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছে।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) সচিবালয়ের ওই ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার দীপ্ত টিভি নিজেদের স্ক্রলে সংবাদ সম্প্রচার বন্ধের খবর দেয় । দুপুর ২টার পর থেকে পাঁচটি বুলেটিন প্রচার করেনি স্টেশনটি। রাত ১১টায় আবার সংবাদে ফেরে তারা।
চাকরিচ্যুত সাংবাদিকরা হলেন- দীপ্ত টেলিভিশনের মিজানুর রহমান, মাহমুদ শাওন এবং এটিএন বাংলার বিশেষ প্রতিনিধি মো. ফজলে রাব্বি।
চ্যানেল আই অনলাইনের ফেসবুক পেজে এক পোস্টে সংস্কৃতি উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলনে ‘পেশাদারিত্ব প্রদর্শন না করার অভিযোগের’ তদন্ত এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক অর্থাৎ জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রফিকুল বাসারকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, দীপ্ত টিভির সংবাদ কার্যক্রম বন্ধ করতে বলেনি সরকার।‘গণহত্যার পক্ষে’ প্রশ্ন করায় টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ নিজেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রাত ১১টার পর দীপ্ত টিভির কয়েকজন সংবাদকর্মী গণমাধ্যমকে বলেন, সংবাদ সেবা কার্যক্রম বন্ধের পর স্টেশনটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সন্ধ্যায় বার্তাকক্ষের কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে । ওই বৈঠকে পুনরায় খবর সম্প্রচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
টেলিভিশনটির সংবাদকর্মীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের বিষয় নিয়েও সেখানে সবিস্তারে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরেন তারা।
কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৭৮তম আসরে ‘আলী’ নামে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের যাওয়া উপলক্ষে সোমবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা ফারুকী। সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা এবং ওই চলচ্চিত্রের কলাকুশলীদের বক্তব্যের পর প্রশ্নোত্তর পর্বে নানা বিষয়ে জানতে চান সাংবাদিকরা।
সেখানে সাংবাদিকদের থেকে প্রশ্ন আসে মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করে আয়োজিত বর্ষবরণ ‘আনন্দ শোভাযাত্রার’ ইউনেস্কো স্বীকৃতি, শোভাযাত্রায় শেখ হাসিনার মুখাকৃতির আদলে মুখোশ এবং জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের নিহতের সংখ্যা নিয়ে। পাল্টাপাল্টি কথায় প্রশ্নোত্তরের এই পর্ব অনেকটা বাহাসে পরিণত হয়। শুরুতে বসে উত্তর দিলেও একপর্যায়ে দাঁড়িয়েও কথা বলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা। বিষয়টি চাউর হলে ওই সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্ন ঘিরে ওই তিন টেলিভিশন সাংবাদিকের ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তাদের ছবিসহ পোস্ট করা হয় ‘জুলাই রেভ্যুলেশনারি অ্যালায়েন্স-জেআরএ’ নামে একটি ফেসবুক পেজে।
তিন সাংবাদিকের পরিচয় দিয়ে করা ওই পোস্টে বলা হয়, ‘আজকের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর প্রেস কনফারেন্সে যারা ফ্যাসিস্ট-এর পক্ষে কথা বলেছে…’
মঙ্গলবার দুপুরে ওই পেজ থেকে আরেকটি পোস্ট করে বলা হয়, ‘এই তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে ‘মার্চ টু দীপ্ত টিভি, চ্যানেল আই, এটিএন বাংলা‘।’
এর মধ্যে দীপ্ত টিভির সংবাদ কার্যক্রম বন্ধ এবং তিন সাংবাদিকে বরখাস্ত বা অব্যাহতি দেওয়ার খবর আসে। বরখাস্ত বা অব্যাহতির চিঠি প্রকাশ করা হয় জেআরএ এর ফেসবুক পেজেও।
সংবাদ সম্প্রচার বন্ধের কারণ জানতে চাইলে দীপ্ত টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক এসএম আকাশ বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ কারণে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আপাতত নিউজ অপারেশন বন্ধ রেখেছে।’
সিনিয়র ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট মিজানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ সংস্কৃতি উপদেষ্টাকে প্রশ্নের কারণে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘চিঠিতে ওই রকম কিছু বলা হয়নি।’
এটিএন বাংলা কর্তৃপক্ষ ফজলে রাব্বীর বরখাস্তের চিঠিতে, অতীতে তার অফিস শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপের কথা বলেছে ।
তবে টেলিভিশন স্টেশনটির প্রধান নির্বাহী সম্পাদক মনিউর রহমান বলেন, সংস্কৃতি উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করাকে ঘিরে জুলাই রেভ্যুলেশনারি অ্যালায়েন্স নামে একটি ফেসবুক পেজে অভিযোগ করা হয়। ‘ব্যবস্থা না নিলে আগামীকাল অফিসের দিকে মার্চ কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের সুনাম এবং সার্বিক দিক বিবেচনা করে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি।’
বিশেষ প্রতিনিধি ফজলে রাব্বীকে পাঠানো বরখাস্তের চিঠিতে বলা হয়, ‘অফিস শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপের জন্য গত ০৫/০৬/২০১৬ ইং ও ০৭/১১/২০২২ ইং তারিখে সতর্কীকরণ এবং পরবর্তীতে গত ১৯/১০/২০২৩ ইং ও ২৯/০৮/২০২৪ ইং তারিখে পরপর দুইবার আপনাকে চাকরি থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।
‘আপনার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মানবিক কারণে বিশেষ বিবেচনায় চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়। এর পরেও আপনি রিপোটিংয়ের ক্ষেত্রে যথাযথ পেশাগত দায়িত্ব পালন না করায় আপনাকে ২৯/০৪/২০২৫ইং তারিখ থেকে চাকরি হতে বরখাস্ত করা হলো।’
চ্যানেল আইয়ের অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর আরেফিন ফয়সাল, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রফিকুল বাসারকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘একটা অভিযোগ উঠেছে, সেটা আমরা তদন্ত করব। আর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এটা একটা অফিসিয়াল প্রসেস।’
Leave a comment