ইউটিউবার ও মাইটিভির পরিচালক তৌহিদ আফ্রিদি এবং তার বাবা নাসির উদ্দীন সাথীর গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদের শীর্ষ নেতা ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। সোমবার (২৬ আগস্ট) দিবাগত রাতে নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে নুর দাবি করেন, মাইটিভি দখলের উদ্দেশ্যে কিছু ব্যক্তি পরিকল্পিতভাবে প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এই গ্রেপ্তার নিশ্চিত করেছে।
নুর লিখেছেন, “‘জনকণ্ঠ’ দখলের মতো ‘মাইটিভি’ দখলেও সুপরিকল্পিতভাবে কিছু ব্যক্তি পরস্পরের যোগসাজশে মাইটিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দীন সাথী ও তার ছেলে তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার করিয়েছে। এতদিন ধরে তারা নগদ অর্থ কিংবা শেয়ার লিখে নেওয়ার জন্য দেনদরবার চালাচ্ছিল। সমঝোতা না হওয়ায় অবশেষে ডিজিটাল ও ফিজিক্যাল মবের মাধ্যমে প্রশাসনকে ব্যবহার করেছে।”
তার ভাষায়, আফ্রিদি ও তার বাবাকে যাত্রাবাড়ী থানার *‘ছাত্র হত্যা মামলা’*য় এক বছর পর আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ “ভিত্তিহীন”।
নুর আরও বলেন, “তৌহিদ আফ্রিদি বা তার বাবা কি সত্যিই এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত—এমন কোনো প্রমাণ কি মামলার বাদী দিতে পারবেন? যদি না পারেন, তবে কেন তাদের এ মামলায় আসামি করে গ্রেপ্তার করা হলো?”
তিনি মন্তব্য করেন, যদি আফ্রিদি আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হয়ে কোনো কর্মকাণ্ডে যুক্ত থেকেও থাকেন, তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা হওয়া উচিত ছিল। পরিবর্তে “অসংশ্লিষ্ট একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করানো অন্যায়” বলে অভিহিত করেন তিনি।
নুরুল হক নুর তার পোস্টে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
তিনি লেখেন, “এভাবে ব্যবসায়ী, গণমাধ্যম মালিক বা সেলিব্রিটিদের মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে গ্রেপ্তার করলে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থা এটিকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করবে। ফলস্বরূপ সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়বে, আর প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পিছপা হয়ে পড়বে।”
নুর সতর্ক করে বলেন, এই ধরনের ভুল সিদ্ধান্ত প্রকারান্তরে দেশে “ফ্যাসিবাদ পুনরুত্থানের পথ প্রশস্ত করতে পারে।”
ফেসবুক পোস্টে নুর আরও দাবি করেন, মাইটিভি দখলের পেছনে যেসব ব্যক্তি কাজ করছে তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। তার মতে, প্রশাসনকে চাপ দিয়ে গণমাধ্যমের মালিকানা বা নিয়ন্ত্রণ দখলের চেষ্টা গণতন্ত্র ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য মারাত্মক হুমকি।
নুরের পোস্টটি প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই নুরের বক্তব্যকে সমর্থন করে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অন্যদিকে কেউ কেউ মনে করছেন, নুর রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে এ ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন।
তৌহিদ আফ্রিদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয় ইউটিউবার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর। পাশাপাশি তিনি মাইটিভির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার বাবা নাসির উদ্দীন সাথী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান। তাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে মাইটিভির মালিকানা নিয়ে জটিলতা ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের অভিযোগ রয়েছে। সাম্প্রতিক গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে এ বিতর্ক নতুন মাত্রা পেল।
Leave a comment