ফিলিস্তিনের গাজার উদ্দেশে ত্রাণ নিয়ে যাত্রা করা একটি বেসামরিক জাহাজে ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটেছে মাল্টা উপকূলের আন্তর্জাতিক জলসীমায়। মানবিক সহায়তা ও অধিকারকর্মীদের বহনকারী জাহাজটিতে সশস্ত্র ড্রোন দিয়ে দুটি পৃথক হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছে আয়োজক সংগঠন ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি)। হামলায় জাহাজটিতে আগুন ধরে যায়, বিদ্যুৎব্যবস্থা বিকল হয়ে পড়ে এবং এটি ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে।
হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে নিরস্ত্র ও বেসামরিক এই জাহাজে হামলা চালানো হয়েছে। শুক্রবার ভোরে জাহাজের জেনারেটরকে লক্ষ্য করে চালানো ড্রোন হামলায় পুরো জাহাজ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং কাঠামোতেও বড় ধরনের ক্ষতি হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের পোস্ট করা ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, জাহাজটির ওপর আগুন জ্বলছে এবং বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। মাল্টা সরকার জানিয়েছে, জাহাজটিতে ১২ জন নাবিক ও ৪ জন বেসামরিক যাত্রী ছিলেন, তবে কেউ হতাহত হয়নি। তাদের সহায়তা দিতে একটি টাগ বোট পাঠানো হয়েছে।
এই মানবিক অভিযানটি গাজায় চলমান অবরোধের প্রতিবাদে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য জরুরি খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে আয়োজিত হয়েছিল। ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জাহাজটিতে ২১টি দেশের অধিকারকর্মীরা অংশ নিয়েছেন, যারা গাজার অবরোধ এবং সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সচেতনতা গড়ে তুলতে চেয়েছেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে এই হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপক নিন্দার সৃষ্টি হয়েছে। ফ্লোটিলা কোয়ালিশন বলছে, ‘এই হামলা শুধু একটি বেসামরিক জাহাজের ওপর নয়, বরং আন্তর্জাতিক মানবিক আইন ও ন্যায়ের ওপর সরাসরি আঘাত।’
গাজা উপত্যকায় বর্তমানে চরম খাদ্যসংকট চলছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও মানবিক সহায়তাদানকারী সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বেশির ভাগ রান্নাঘর ও খাদ্যবণ্টন কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে, কারণ সব মজুদ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে নতুন করে সামরিক অভিযান শুরু করে এবং গত দুই মাসে উপত্যকাটি পুরোপুরি অবরুদ্ধ করে রেখেছে।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা দাবি করেন, গাজায় ত্রাণ পৌঁছালে সেগুলো হামাস সদস্যদের হাতে চলে যায়। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থাগুলো। তারা বলছে, ত্রাণ কার্যক্রম যথাযথ তদারকির মধ্যেই পরিচালিত হচ্ছে।
২০১০ সালেও তুরস্ক থেকে গাজার উদ্দেশে ত্রাণ নিয়ে যাওয়া মাভি মারমারা জাহাজে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ১০ জন নিহত হয়েছিলেন। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন আবার দেখা গেল ২০২৫ সালের এই মানবিক যাত্রায়।
এই ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দা ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, জাতিসংঘ ও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে এবং ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতদের তলব করে জবাবদিহি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে ফ্লোটিলা কোয়ালিশন।
Leave a comment