দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গা যেন এবার দেশের আগুনঝরা ভুভাগে রূপ নিয়েছে। টানা তৃতীয় দিনের মতো সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে এ জেলায়। শনিবার বিকেল তিনটায় চুয়াডাঙ্গার হাটকালুগঞ্জ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সর্বোচ্চ ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে, যা চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ।
এর আগে বৃহস্পতিবার ৩৯.৭ ডিগ্রি এবং শুক্রবার ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। প্রতিদিনই আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়াবিদদের আশঙ্কা, আগামীকাল তাপমাত্রা আরও ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে।
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। শহর-গ্রাম সর্বত্রই বিরাজ করছে অস্বস্তিকর গরম। রাস্তাঘাট ফাঁকা, লোকজন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হচ্ছেন না। তবে খেটে খাওয়া মানুষের কোনো রেহাই নেই।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হাতিকাটা, আলুকদিয়া ও ভালাইপুরসহ বিভিন্ন খাদ্যশস্য গুদাম ও চাতালে শত শত শ্রমিক কাজ করছেন প্রখর রোদে। শনিবার দুপুরে হাতিকাটা এলাকায় এনামুল হকের গুদামসংলগ্ন চাতালে দেখা যায়, একদল শ্রমিক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ধান শুকিয়ে গুদামে তুলছেন।
৫৫ বছর বয়সী শ্রমিক সরদার মিরাজুল ইসলাম বলেন, “সূর্যের তাপে গা পুড়ে যাচ্ছে, তাও তো থামা যাবে না। ঘরে বসে থাকলে সংসার চলবে না।”
আলুকদিয়ায় ধান শুকানো ও গুদামজাতের কাজে নিয়োজিত শ্রমিক রিংকু মিয়া বলেন, “গরিব মানুষ, রোদ-গরম বুঝলে খেয়ে মরতে হবে। এই কাজই আমাদের ভরসা।”
এদিকে, স্থানীয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, আকাশে কোনো মেঘ নেই, পশ্চিম দিক থেকে গরম বাতাস প্রবেশ করছে এবং জলীয় বাষ্পের আধিক্য রয়েছে—এই কারণে তাপমাত্রা বাড়ছে।
তিনি জানান, “আগামীকাল তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। তবে পরশু থেকে তা কিছুটা কমলেও তাপপ্রবাহ থাকবে। পশ্চিমা লঘুচাপ সক্রিয় না হওয়া পর্যন্ত স্বস্তি আসার সম্ভাবনা নেই।”
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংজ্ঞা অনুযায়ী, ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রাকে “অতি তীব্র তাপপ্রবাহ” বলা হয়। চুয়াডাঙ্গার শনিবারের তাপমাত্রা সেই মাত্রা অতিক্রম করেছে।
২০০২ সাল থেকে এ পর্যন্ত আবহাওয়ার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড সবচেয়ে বেশি হয়েছে এপ্রিল মাসে। মে মাসেও কয়েকবার এই রেকর্ড ভেঙেছে। সর্বশেষ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল, ৪৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এই তাপপ্রবাহের মধ্যে বিশেষ করে দিনমজুর, কৃষিকর্মী ও খোলা আকাশের নিচে কাজ করা মানুষেরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এমন গরমে বারবার পানি পানের পরামর্শ দিচ্ছেন, ছায়াযুক্ত স্থানে থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন।
এদিকে প্রশাসন থেকেও গরমের প্রকোপে শিশু ও বৃদ্ধদের বাড়ির বাইরে অপ্রয়োজনে বের না হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গাবাসীর একটাই প্রত্যাশা—বৃষ্টি হোক, আর যেন তাপপ্রবাহ না বাড়ে।
Leave a comment