Home আন্তর্জাতিক জোহরান মামদানির জয় নিয়ে ক্ষোভ: মোদি-ভক্তদের আক্রমণ
আন্তর্জাতিক

জোহরান মামদানির জয় নিয়ে ক্ষোভ: মোদি-ভক্তদের আক্রমণ

Share
Share

 

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আসন্ন মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিসেবে শক্তিশালী পদে উঠেছেন জোহরান মামদানি। তার এই জয় শুধু নিউইয়র্কের রাজনীতিতেই নয়, বরং ভারত ও প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যেও তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। ২৪ জুন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারিতে বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়ার পর থেকে তার বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য ও আক্রমণ শুরু হয়েছে। বিশেষত ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং হিন্দুত্ববাদী মহল থেকে এসব আক্রমণ আসছে।

জোহরান মামদানি, যিনি মুসলিম এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত, তার বিরুদ্ধে এ আক্রমণের পেছনে তার ধর্মীয় পরিচয় এবং মানবাধিকার বিষয়ে তার অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের আক্রমণ একদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচকদের প্রতি বিদ্বেষ, আর অন্যদিকে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে প্রচ্ছন্ন বৈষম্য প্রকাশ করছে।

জোহরান মামদানি তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে বরাবরই মানবাধিকার ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে সরব ছিলেন। বিশেষ করে ভারত এবং ফিলিস্তিনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় তিনি তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তিনি গাজা, কাশ্মীর, এবং ভারতের বাবরি মসজিদ নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে বারবার শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। এসব বক্তব্য তাকে ভারতীয় মুসলিম বিরোধী গোষ্ঠী ও হিন্দুত্ববাদীদের নিশানা বানিয়েছে।

ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির সংসদ সদস্য কঙ্গনা রনৌত তার সোশ্যাল মিডিয়া পেজে লিখেছেন, “তিনি তো ভারতীয়র চেয়ে পাকিস্তানির মতো শোনাচ্ছেন।” কঙ্গনা আরও বলেন, “তাঁর (জোহরান) হিন্দু পরিচয় বা বংশ যা-ই হোক, এখন দেখছি, তিনি হিন্দুধর্ম ধ্বংস করতেই উদ্‌গ্রীব।” একই সময়, ভারতীয় মিডিয়া ‘আজ তক’ একটি প্রতিবেদনে দাবি করে যে, জোহরান ভারতের বিরুদ্ধে কাজ করা সংগঠনগুলোর কাছ থেকে অর্থ সহায়তা পেয়েছেন এবং তাদের সমর্থন পেয়ে নিউইয়র্কের মুসলিম জনসংখ্যাকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছেন।

এমন বিদ্বেষপূর্ণ আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব অর্গানাইজড হেট’ (CSOH) এর গবেষণা পরিচালক কায়লা ব্যাসেট মন্তব্য করেছেন, “এটি শুধু জোহরান মামদানির বিরুদ্ধে নয়, বরং পুরো মুসলিম সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে আক্রমণ করা হচ্ছে। এটা একটি প্রচেষ্টা যে—মুসলিমরা আমেরিকান হতে পারে না।”

জোহরান মামদানি, যিনি নিউইয়র্কে প্রাথমিক নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন, বর্তমানে নানা ধরনের সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছেন। তার এই জয় অনেকের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বার্তা, তবে তিনি জানেন যে, তার সশস্ত্র বক্তব্য ও ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে এমন আক্রমণ আসবে। তাঁর বিরুদ্ধে আক্রমণকারী গোষ্ঠী মনে করেন, জোহরান কেবল মুসলিমদেরই প্রতিনিধিত্ব করেন না, বরং তার বক্তব্যও ভারতের বিরুদ্ধে। তবে এই সমালোচনার মধ্যেও তার জয় মুসলিম কমিউনিটির মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে, বিশেষত মুসলিম বিদ্বেষী রাজনৈতিক পরিবেশে।

এদিকে, বিজেপি সমর্থিত সংবাদমাধ্যমে রিপোর্ট করা হয়েছে যে, জোহরান মামদানি “ইন্তিফাদা” শব্দটি ব্যবহার করে এবং এমন সংগঠনের সমর্থন দাবি করেন যারা ভারতের বিরুদ্ধে কাজ করে। তবে তার সমর্থকরা এই রিপোর্টগুলোকে ভুল বা বিভ্রান্তি হিসেবে দেখে, এবং তারা মনে করে, জোহরান যেভাবে প্রতিবাদ করেছেন তা কোনো জাতীয় বা ধর্মীয় বিদ্বেষের নয়, বরং মানবাধিকার ও সমতার পক্ষে।

অন্যদিকে, জোহরান নিজেও তার অবস্থান স্পষ্ট করে বলেছেন যে, তার মূল লক্ষ্য মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষা করা, এবং কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব না করে নিজের জনগণের সেবা করা। তার এই বক্তব্য তাকে বিরোধী দল ও গোষ্ঠীগুলোর আক্রমণের মুখে ফেলেছে, কিন্তু তিনি তার উদ্দেশ্যে দৃঢ় থাকছেন।

জোহরানের প্রাথমিক নির্বাচনী জয়ে তার বিরোধীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানালেও, স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি তার নির্বাচনী প্রচারকে আরও শক্তিশালী করেছে। ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এবং স্বাধীন প্রার্থীদের মধ্যে জোহরান অন্যতম জনপ্রিয় নাম হয়ে উঠেছেন, বিশেষ করে মুসলিম ভোটারের কাছে। নিউইয়র্কের এশীয়-অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে তার জয়ের সম্ভাবনা বাড়ছে, এবং এটি তার সামনে একটি বড় রাজনৈতিক সুযোগ এনে দিতে পারে।

অরবিন্দ রাজাগোপাল, নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির গণমাধ্যম বিষয়ক অধ্যাপক বলেন, “তাঁর বিজয়কে অনেকে ভূমিধসের মতো বলছেন। তিনি শুধু স্প্যানিশ নয়, হিন্দি, উর্দু ও কিছুটা বাংলাও বলতে পারেন। এমন প্রার্থী আজকাল খুবই বিরল।”

এটা পরিষ্কার যে, জোহরান মামদানির জয় শুধু একটি রাজনৈতিক মাইলফলক নয়, বরং এটি আমেরিকার মুসলিম কমিউনিটির রাজনৈতিক শক্তি এবং তাদের অধিকার সুরক্ষার জন্য একটি নতুন দৃষ্টিকোণ। তার মতামত এবং রাজনৈতিক অবস্থান অনেকের কাছে সমর্থন পেতে পারে, তবে তার বিরুদ্ধে বিদ্বেষী প্রচারণা তাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। যাই হোক, তিনি এখনও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এবং তার প্রচার অভিযান চলছে।

এখন তার বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারের সত্ত্বেও, তিনি যদি নির্বাচনে জয়ী হন, তবে এটি না শুধু তার রাজনৈতিক জীবনে একটি বড় অর্জন হবে, বরং আমেরিকার রাজনীতিতে মুসলিম এবং দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত প্রার্থীদের শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

 

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে ট্রান্সজেন্ডার সাঁতারুর স্বর্ণপদক বাতিলের সিদ্ধান্ত

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ক্রীড়াঙ্গনে ট্রান্সজেন্ডার ক্রীড়াবিদদের অংশগ্রহণ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছেন এবার। দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর...

চোরাই স্বর্ণ পরে স্ত্রীর টিকটক, আটক স্বামী

চুরি হওয়া গহনা পরে টিকটক করছিলেন স্ত্রী। সেটি দেখে কুমিল্লার দেবিদ্বার থানা পুলিশ তার স্বামী মো. সোহেল মিয়াকে গ্রেফতার করে। আদালতের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার...

Related Articles

জেরেমি করবিনের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা

  বৃটিশ রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে, যখন লেবার পার্টির...

তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া

আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই)...

৪৮ ঘণ্টায় নিহত হয়েছে ৩ শতাধিক ফিলিস্তিনি

গাজা সরকারের মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে গত ৪৮ ঘণ্টায়...

করাচিতে পাঁচ তলা ভবন ধসে নিহত হয়েছে ৫ জন

পাকিস্তানের করাচিতে একটি পাঁচ তলা আবাসিক ভবন ধসে পড়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত...