গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে অনুষ্ঠিত পাঁচ দিনব্যাপী জোড় ইজতেমার আখেরি মোনাজাত আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে। আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে যেকোনো সময় মোনাজাত শুরু হতে পারে। চলমান ইজতেমায় দাওয়াতি কাজ ও ধর্মীয় পরিবেশনার পাশাপাশি হাজারো মুসল্লি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অংশ নেন।
মোনাজাত পরিচালনা করবে পাকিস্তানের প্রখ্যাত আলেম মাওলানা আহমদ বাটলার। আখেরি মোনাজাত শেষে চিল্লাধারী মুসল্লিরা দাওয়াতি কাজের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন অঞ্চলে রওনা হবেন এবং আগামী বিশ্ব ইজতেমার সময় পুনরায় ময়দানে সমবেত হবেন।
সোমবার ছিল ইজতেমার চতুর্থ দিন। দিনটি খুরুজি বয়ান, তসবিহ-তাহলিল, জিকির-আসকার, ইস্তেগফার এবং নফল ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করেন সমবেত মুসল্লিরা। ভোরে ভারতের মাওলানা মুফতি আবু বকর খুরুজের বয়ান পেশ করেন। আসরের পর বয়ান করেন বাংলাদেশের মাওলানা রবিউল হক, আর মাগরিবের পর বয়ান করেন তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বি হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ জুবায়ের আহমেদ। ইজতেমা মাঠজুড়ে ছিল দাওয়াতি পরিবেশ, আমল-ইবাদতে ব্যস্ত অসংখ্য মুসল্লি এবং ধর্মীয় আবহে উদ্দীপ্ত অংশগ্রহণকারীদের সমাগম।
চলতি জোড় ইজতেমায় সর্বশেষ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে সোমবার দুপুরে। আজিজুর রহমান (৬০) নামে এক মুসল্লি ওজুখানার পাশে হঠাৎ স্ট্রোক করলে ঘটনাস্থলেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর থানার দেওপুরা গ্রামের বাসিন্দা এবং হাবিবুর সরদারের ছেলে বলে জানা গেছে।
শুরায়ি নেজামের গণমাধ্যম সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তার এ মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এবারের জোড় ইজতেমায় মৃত মুসল্লির সংখ্যা দাঁড়ালো ছয়জনে। ইজতেমা সংশ্লিষ্ট একাধিক স্বেচ্ছাসেবক জানান, কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড শীত ও অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে অনেক বয়স্ক মুসল্লি শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছেন। তবে মাঠে মেডিকেল টিম ও অ্যাম্বুলেন্স সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে আয়োজকেরা জানিয়েছেন।
জোড় ইজতেমা মূলত বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতিমূলক সমাবেশ। এতে দেশ-বিদেশের চিল্লাধারী মুসল্লিরা একত্র হয়ে মাশওয়ারা, বয়ান, দাওয়াতি কার্যক্রমের চর্চা এবং মুসল্লিদের তালিম প্রদান করেন। এই আয়োজন ধারাবাহিকভাবে তাবলিগ জামাতের আন্তর্জাতিক কাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।বিশ্ব ইজতেমার আগে অনুষ্ঠিত এই জোড় ইজতেমায় সাধারণত জনগণের ভিড় তুলনামূলক কম হলেও চিল্লাধারী মুসল্লিদের উপস্থিতির কারণে ধর্মীয় কার্যক্রম অত্যন্ত সুসংগঠিত থাকে। বয়ান ও আমল-ইবাদতের পাশাপাশি মুরুব্বিদের নেতৃত্বে ইসলামি দাওয়াতি কর্মপরিকল্পনাও তৈরি হয়।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং বিভিন্ন বাহিনী ইজতেমাকে কেন্দ্র করে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এছাড়া মাঠে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, ওজুখানা, টয়লেট, মেডিকেল ক্যাম্প এবং হারানো-পাওয়া বুথসহ নানা সেবামূলক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
তাবলিগ জামাতের মুরুব্বিরা জানিয়েছেন, আখেরি মোনাজাত শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। মুসল্লিদের নিরাপত্তা ও নির্বিঘ্ন অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে স্বেচ্ছাসেবকরা দিনরাত কাজ করছেন।মঙ্গলবার ভোর থেকে ময়দানে মুসল্লিদের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। তুরাগ তীরের চারপাশে নানা জেলা থেকে আসা মুসল্লিদের তাসবিহ-তাহলিলে মুখরিত হয়ে উঠেছে ইজতেমা এলাকা
Leave a comment