বৃটিশ রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে, যখন লেবার পার্টির সাবেক নেতা জেরেমি করবিন নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গত কয়েকদিন ধরে এমন আলোচনার ঝড় উঠেছিল এবং গতকাল, ৪ জুলাই, বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। লেবার পার্টি থেকে সদ্য পদত্যাগ করা এমপি জারা সুলতানা এই পরিকল্পনার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁর মতে, লেবার পার্টি থেকে বের হয়ে তিনি ও করবিন নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করবেন, যা বামপন্থি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।
জারা সুলতানা, যিনি কভেন্ট্রি সাউথের এমপি ছিলেন, জানান যে তিনি এবং জেরেমি করবিন নতুন দল গঠনের লক্ষ্যে একত্রিত হয়েছেন। সুলতানা পদত্যাগের পর এক্স-এ দেওয়া তার বিবৃতিতে বলেন, ‘ওয়েস্টমিনস্টার পদ্ধতি ভেঙে পড়েছে, এবং দেশের প্রকৃত সংকট আরও গভীর।’ তিনি এই পদক্ষেপকে শুধু দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার দুর্বলতার প্রতীক হিসেবে দেখছেন।
গত বৃহস্পতিবার সকালে আইটিভির একটি অনুষ্ঠানে জেরেমি করবিন জানান, আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগে বামপন্থি এমপিদের নিয়ে একটি বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গঠন করতে আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, ‘আমরা একত্রিত হয়ে একটি শক্তিশালী গোষ্ঠী তৈরি করব। এটি এমন একটি দল হবে যা দারিদ্র্য, বৈষম্য, এবং শান্তিপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতির উপর ভিত্তি করে গঠিত হবে।’ করবিন আরও বলেন, ‘আমি কাজ করতে এসেছি, জনগণের সেবা করতে, যেমনটা সবসময় করে এসেছি। গত এক বছর ধরে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি, এবং এখন আমাদের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সামনে।’
নতুন দলের প্রতিষ্ঠাতা জেরেমি করবিন জানিয়েছেন, তার নেতৃত্বে বামপন্থি এই দলটি দেশের জন্য একটি নতুন দিশা তৈরি করবে, যা বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে উঠবে। গত এক বছর ধরে করবিন এবং তাঁর সমর্থকরা ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট অ্যালায়েন্স’ নামে একটি ছোট দল গঠন করেছিলেন। এখন তারা সেটিকে বড় আকারে প্রতিষ্ঠিত করার পরিকল্পনা করছেন।
এদিকে, জারা সুলতানা পদত্যাগের পর এক্স-এ আরো লিখেছেন, ‘লেবার পার্টি এখন আর জনগণের শক্তি হয়ে উঠতে পারছে না। তাদের মধ্যে আজকাল কোনো বাস্তব পরিকল্পনা নেই, বরং সব কিছু গডফাদারির মতো চালানো হচ্ছে। আমরা একটা স্বাধীন, শক্তিশালী দলের দিকে এগোচ্ছি, যা শুধু একদিক থেকেই রাজনীতি করবে না।’ তিনি আরও যোগ করেছেন যে, ‘আমরা লেবার পার্টি থেকে পদত্যাগ করেছি, কারণ তারা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের পক্ষে কাজ করতে সক্ষম হচ্ছে না।’
করবিনের নেতৃত্বাধীন নতুন দলটি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটি গা dark ঘোলানো শক্তির মত উঠে আসবে, যা ক্ষমতায় আসার পরে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে নিরলস কাজ করবে। বর্তমান পরিস্থিতি এবং যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক ডিনামিক্স দেখে অনেকেই ভাবছেন যে, করবিনের দলটি সারা দেশে তার প্রভাব বিস্তার করবে। এই দলটি কেবলমাত্র পার্লামেন্টের অধিকারী নয়, বরং ব্যাপক জনগণের সমর্থনও লাভ করতে পারে। করবিনের দলের গঠন এই দিক থেকে ইতিহাসে এক অনন্য স্থান নিতে পারে।
গাজা ইস্যুতে করবিন ও তার দলের বিরোধিতার কারণে অনেক সংসদ সদস্য তাদের দল থেকে বের হয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তির সৃষ্টি করেছেন। যেমন, লেস্টার সাউথের শোকাত আদম, বার্মিংহাম পেরি বারের আয়ুব খান, ব্ল্যাকবার্নের আদনান হুসেইন, এবং ডিউসবুরি ও ব্যাটলির ইকবাল মোহাম্মদ—এই চারজন এমপি করবিনের ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট অ্যালায়েন্স’-এর সদস্য হিসেবে একত্রিত হয়েছেন। এই জোটের সংসদে সদস্য সংখ্যা বর্তমানে রিফর্ম ইউকে এবং ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির সমান এবং গ্রিন পার্টি ও প্লেইড কামরির চেয়ে বেশি।
এই দলটির মূল লক্ষ্য হবে একটি এমন রাজনৈতিক কাঠামো তৈরি করা যা বৈষম্য, দারিদ্র্য এবং অন্যান্য সামাজিক সমস্যাগুলির মোকাবিলা করবে। তাদের লক্ষ্য হবে মানবাধিকার এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে কাজ করা, যেখানে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী রিশি সুনাক এবং তার দল, কনজারভেটিভ পার্টি, এদিকে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তীব্র প্রতিরোধের সম্মুখীন। লেবার পার্টির প্রধান কির স্টারমারও কমপক্ষে একাধিক পদক্ষেপে বিতর্কিত হয়ে উঠেছেন। করবিনের নতুন রাজনৈতিক দল এ ধরনের ভুল ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করবে এবং জনগণের সুবিধার্থে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেবে।
শীঘ্রই, আগামী জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হতে পারে, যা এই নতুন দলটির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হতে পারে। করবিনের রাজনৈতিক কৌশল, তাঁর শীর্ষ নেতৃত্বের ভিশন এবং দলের দৃষ্টিভঙ্গি যদি সফলভাবে জনপ্রিয় হয়, তবে এটি যুক্তরাজ্যের ভবিষ্যত রাজনীতিতে একটি শক্তিশালী প্রভাব ফেলবে।
এছাড়া, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আরও নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে করবিনের দলের একত্রিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা ভবিষ্যতের রাজনৈতিক পরিবেশে আরো নতুন দ্বন্দ্ব এবং চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।
শেষ পর্যন্ত, করবিনের দলটি কেবল বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে বিরোধিতা নয়, বরং একটি নতুন গণতান্ত্রিক আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
Leave a comment