বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি রাজনৈতিক দল আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে। জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন, সাংবিধানিক আদেশ জারি এবং নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট আয়োজনসহ পাঁচ দফা দাবিতে এই কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে।
রোববার (২৬ অক্টোবর) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে দেশের সব জেলা ও মহানগর এলাকায় পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচি সফল করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশকে একটি ন্যায়ভিত্তিক, জবাবদিহিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী জুলাই জাতীয় সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন ছাড়া রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ন্যায়নিষ্ঠ প্রশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।”
আন্দোলনরত আট রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে গত ১৯ অক্টোবর রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ দফা গণদাবি উত্থাপন করা হয়। সেগুলোর মধ্যে প্রধান দাবি হলো—
১️.জুলাই জাতীয় সনদ দ্রুত বাস্তবায়ন,
২️. সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ,
৩️. নভেম্বরের মধ্যে জাতীয় গণভোট আয়োজন,
৪️.রাজনৈতিক দলগুলোর বৈধ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, এবং
৫️.একটি জবাবদিহিমূলক নির্বাচন কমিশন গঠন।
বিবৃতিতে মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, “আন্দোলনের এ পর্যায়ে জনগণই হবে প্রধান শক্তি। শান্তিপূর্ণভাবে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা দেশব্যাপী সংগঠিতভাবে মাঠে নামব। কোনো উসকানি বা সহিংসতা নয়—আমরা গণতান্ত্রিক পথে আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী।”
জামায়াতে ইসলামী সোমবারের বিক্ষোভের পাশাপাশি মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) আরও এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ওইদিন দেশের মহানগর, জেলা, উপজেলা ও থানা পর্যায়ে আলোচনা সভা, দোয়া অনুষ্ঠান, সভা-সমাবেশ এবং বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হবে।
দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে স্থানীয় নেতাকর্মীদের ইতোমধ্যে প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জনগণের অংশগ্রহণ বাড়াতে প্রচারপত্র বিতরণ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
আন্দোলনে জামায়াতের পাশাপাশি আরও সাতটি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। এসব দলের মধ্যে রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ও ইসলামী গণতান্ত্রিক লীগ।
এই জোটের নেতারা মনে করছেন, জুলাই জাতীয় সনদের সফল বাস্তবায়নই দেশের রাজনৈতিক সংস্কারে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। তারা বলেন, “গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও নাগরিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হলে জনগণের মতামতকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জুলাই জাতীয় সনদ নিয়ে বিভিন্ন দলের অবস্থান এখন দেশের রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে গণভোট আয়োজনের দাবিটি রাজনৈতিক পরিসরে নতুন বিতর্ক তৈরি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক (অব.) ড. মফিজুল ইসলাম বলেন, “এই বিক্ষোভ কর্মসূচি এখনকার রাজনৈতিক দৃশ্যপটে গুরুত্বপূর্ণ। এটি যদি গণসমর্থন পায়, তাহলে সরকার ও প্রশাসনের ওপর সনদ বাস্তবায়নের চাপ বাড়তে পারে।”
অন্যদিকে, বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনাসহ বিভিন্ন জেলায় বাড়ানো হয়েছে পুলিশ ও র্যাবের টহল। তবে এখন পর্যন্ত কোথাও বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, “বিক্ষোভ যেন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়, সেদিকে আমাদের নজর আছে। কেউ যদি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত করার চেষ্টা করে, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের দাবিতে চলমান এই রাজনৈতিক আন্দোলন দেশের রাজনীতিতে নতুন গতি এনে দিয়েছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। আগামী নভেম্বরের মধ্যে গণভোট আয়োজন হবে কিনা—এখন তা নিয়েই রাজনৈতিক অঙ্গনে বাড়ছে জল্পনা-কল্পনা।
Leave a comment