ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি মহিলা মাদ্রাসায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে সাত শিক্ষার্থী ও একজন আয়া দগ্ধ হয়েছেন। বুধবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে শহরের ভাদুঘর এলাকার দারুন নাজাত মহিলা মাদ্রাসায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
ঘটনাটি ঘটার পরপরই শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা চিৎকারে ছুটে আসেন এবং আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
দগ্ধ শিক্ষার্থীরা হলেন নবীনগর উপজেলার তালগাটি গ্রামের নুরুল হকের মেয়ে নুসরাত (১০), সিরাজগঞ্জ জেলার আবু সাইদের মেয়ে সাদিয়া খাতুন (৬), ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সাদেকপুর গ্রামের মজনু মিয়ার মেয়ে রওজা আক্তার (১২), ভাদুঘর এলাকার কবির হোসেনের মেয়ে নুসরাত (১১), একই এলাকার কাবির মিয়ার মেয়ে জান্নাতুল মাওয়া (৮), কসবা উপজেলার শিমরাইল গ্রামের আনোয়ার হোসেনের মেয়ে উম্মে তাইসান (৫) এবং মাদরাসার আয়া আলেয়া বেগম (২২)।
মাদরাসা কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, চারতলা ভবনের ছাদ থেকে বাইরের বিদ্যুতের তারের উপর একটি কাপড় পড়ে গিয়েছিল । পরে মাদরাসার আয়া আলেয়া জানালা দিয়ে একটি স্টিলের লম্বা পাইপ ব্যবহার করে কাপড়টি আনতে চেষ্টা করেন।
দারুন নাজাত মহিলা মাদরাসার শিক্ষক ক্বারী মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, “আলেয়া জানালা দিয়ে পাইপ বাড়িয়ে কাপড় টানার সময় পাইপটি তারে স্পর্শ করলে তিনি তৎক্ষণাৎ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। তখন কয়েকজন ছাত্রী তাকে বাঁচাতে গিয়ে তার সংস্পর্শে আসে এবং তারাও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়।”
তিনি আরও জানান, “ঘটনার পরপরই সবাইকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। আমাদের কিছু শিক্ষার্থীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর দগ্ধ হয়েছে।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অমিতাভ দাস তালুকদার জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং দুর্ঘটনার পেছনের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, “এটি একটি দুঃখজনক দুর্ঘটনা। আমরা মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি এবং বিদ্যুতের তারের অবস্থানসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা যাচাই করছি। উন্নত চিকিৎসার জন্য কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।”
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, মাদরাসা ভবনের খুব কাছ দিয়েই উচ্চক্ষমতার বিদ্যুতের তার গেছে। তারের অবস্থান বিপজ্জনক হলেও এর বিষয়ে পূর্বে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এলাকাবাসী দ্রুত বিদ্যুতের তার সরানো ও ভবনের আশপাশের নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দগ্ধদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর গুরুতর তিনজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বিদ্যুৎ নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ভবনের খুব কাছ দিয়ে বিদ্যুতের তার থাকা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। তারা বলেন- স্কুল, মাদরাসা বা আবাসিক ভবনের চারপাশে বিদ্যুতের তারের নিরাপদ দূরত্ব নিশ্চিত করা জরুরি।
Leave a comment