মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ফারহান হাসান পরীক্ষা শেষে শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হয়ে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। এর মধ্যে স্কুলটির একটি ভবনে আছড়ে পড়ে আগুন ধরে যাওয়া বিমানটি।
ফারহান বলে, ‘ আমার চোখের সামনেই আগুন ধরা প্লেনটা বিল্ডিংয়ে আঘাত করছে। আমার একটা বেস্ট ফ্রেন্ড, যে পরীক্ষার হলে আমার সঙ্গেই ছিল। ও আমার চোখের সামনেই মারা গেছে।’
ওই ঘটনার কিছু ভিডিওতেও স্কুলটির একটি দোতলা ভবনের নিচতলায় বিধ্বস্ত বিমাটিতে আগুন জ্বলতে ও ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের নয়টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে চেষ্টা করে আগুন নেভানোর। সেইসঙ্গে চলতে থাকে উদ্ধার তৎপরতা।
প্রত্যক্ষদর্শী ফারহান বিবিসিকে বলে, ‘স্কুল গেটের ভেতরে অনেকগুলো গার্ডিয়ান দাঁড়ায়ে ছিল, আর ছুটির টাইমে ছোটরা বের হচ্ছিল। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘স্কুল ছুটি হবে হবে—এমন সময় বিমানটা সরাসরি জুনিয়র সেকশনের বিল্ডিংয়ে আঘাত করে।’
আরেক শিক্ষক মাসুদ তারিক বলেন, ‘আমি বিস্ফোরণের শব্দ শুনে যখন পিছনে ঘুরে তাকালাম, কেবল আগুন আর ধোঁয়া দেখছিলাম… সেখানে অনেক গার্ডিয়ান ও শিশুরা ছিল।’
দুর্ঘটনার পর হতাহতদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেন সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ সেচ্ছাসেবীরা। এক নারী বিবিসিকে বলেন, তার ছেলে স্কুলের ভেতরেই ছিল। তবে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর থেকে তিনি আর তার ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।
জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট থেকে জানানো হয়েছে, শিশুসহ প্রায় ৫০ জনের বেশি মানুষকে দগ্ধ অবস্থায় নেওয়া হয়েছে হাসপাতালে। এ সময় হাসপাতালের ভেতর ও বাইরে স্বজনদের ভিড় দেখা যায়। শাহ আলম নামে এক ব্যক্তি তার ভাইকে জড়িয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন, ‘আমার ভাইপো এখন মর্গে।’
তার ভাইয়ের আট বছর বয়সী ছেলে তানভীর আহমেদ মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় হতাহতের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু, যাদের বয়স ১৪ বছরের মধ্যে। অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় আহতদের জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটসহ ঢাকার আরও সাতটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া
হচ্ছে।
দুর্ঘটনার পর এক বিবৃতিতে আন্তঃবাহিনী সংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটি ছিল বিমানবাহিনীর এফটি–৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান। প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহৃত চীনের তৈরি এই যুদ্ধবিমান যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে উত্তরার ওই স্কুল ভবনে আছড়ে পড়েছিল। তারা জানিয়েছে, সোমবার (২১ জুলাই) দুপুর ১টা ৬ মিনিটে রাজধানীর কুর্মিটোলার বিমানবাহিনী ঘাঁটি এ কে খন্দকার থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর স্কুল ভবনের ওপর এসে বিধ্বস্ত হয় বিমানটি।
বাংলাদেশের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে এই খবর পায়। ওই ঘটনায় নিহত হয়েছেন পাইলট লেফটেন্যান্ট তৌকির আহমেদও। বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ঘটনাটি তদন্তে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে ।
Leave a comment