এই বছরের ঈদুল ফিতরে মুক্তিপ্রাপ্ত ছয়টি বাংলা সিনেমার মধ্যে তিনটি—‘বরবাদ’, ‘দাগি’ ও ‘জংলি’—দর্শকদের মধ্যে তুমুল সাড়া ফেলেছে। দেশজুড়ে প্রেক্ষাগৃহগুলোতে চলছে টিকিটের জন্য হুড়োহুড়ি। স্টার সিনেপ্লেক্সের শাখাগুলোতেও হাউসফুল শো একটানা চলছেই। এমনকি ঈদের সপ্তম দিনেও অনলাইন ও কাউন্টার—দুই মাধ্যমেই আগেভাগে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে সব টিকিট। দর্শকের এমন আগ্রহ দেখে খুশি চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা, তবে সেইসঙ্গে রয়েছে হতাশা, ক্ষোভ আর প্রত্যাশা।
স্টার সিনেপ্লেক্স বর্তমানে ‘বরবাদ’-এর ৪০টি, ‘দাগি’র ২৬টি এবং ‘জংলি’র ৭টি করে শো চালাচ্ছে। যদিও এই সংখ্যা দর্শক চাহিদার তুলনায় অনেক কম বলেই মনে করছেন প্রযোজক ও নির্মাতারা। ‘বরবাদ’-এর প্রযোজক শাহরিন আক্তার জানালেন, দর্শক এমনভাবে ছবিটি গ্রহণ করেছে যে, মধ্যরাতেও বিভিন্ন হলে শো চালাতে হচ্ছে। তিনি বলেন, “আমাদের সিনেমায় এমন আগ্রহ, ৪০টি শোর সঙ্গে আরও ২০টি বাড়ালেও হাউসফুলই যাবে।”
‘দাগি’র প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিলও একই সুরে বললেন, “প্রথমে ২১টা শো ছিল, পরে কিছুটা বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু আরও ১০টা শো বাড়ালেও তা হাউসফুল যাবে। দর্শক যা সাড়া দিচ্ছে, তা অভাবনীয়।”
‘জংলি’র প্রযোজক জাহিদ হাসান আফসোসের সুরে জানালেন, “আড়াই শ’ আসনের হলে আড়াই হাজার মানুষ টিকিট না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। অথচ আমাদের ছবির মাত্র ৭টা শো! সিনেপ্লেক্সের সাতটি শাখায় তিনটি করে মোট ২১টি শো হলেও হাউসফুল যাবে বলে আমার বিশ্বাস।”
এই বাস্তবতায় যখন বাংলা সিনেমাগুলোর জন্য চাহিদা তুঙ্গে, তখন স্টার সিনেপ্লেক্সে চলেছে কিছু পুরোনো হলিউড সিনেমাও। এতে অনেক দর্শক ও চলচ্চিত্রপ্রেমীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। স্টার সিনেপ্লেক্সের বিপণন কর্মকর্তা মেজবাহ আহমেদ বলছেন, “আমরা সব ধরনের ছবি দেখানোর চেষ্টা করি, বৈচিত্র্য রাখতে চাই। চাহিদা থাকা সত্ত্বেও কিছুটা সংকট রেখে চলি—এটা আমাদের একটি মার্কেটিং কৌশল। এতে মুখে মুখে প্রচারণা বাড়ে।”
তবে নির্মাতাদের বক্তব্য ভিন্ন। তাঁদের মতে, এই সময়টায়, বিশেষত ঈদের উৎসব পরবর্তী তিন সপ্তাহ বাংলা ছবিগুলোর শো বাড়ানো উচিত। হলিউড নয়, দেশীয় কনটেন্টকেই অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। তারা মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দর্শক যা বলছে, তা সিনেমা শিল্পের জন্য ইতিবাচক বার্তা—শুধু দরকার সহযোগিতা ও পরিকল্পিত প্রদর্শনী।
স্টার সিনেপ্লেক্স বলছে, তারা চান দর্শকের চাপ দীর্ঘ সময় থাকুক। তাদের অভিজ্ঞতা থেকে বলছেন, ‘বরবাদ’, ‘দাগি’ ও ‘জংলি’ এভাবেই অন্তত দেড় মাস দর্শকের আগ্রহ ধরে রাখতে পারবে। তবে চলচ্চিত্রপ্রেমীরা এখনই জানতে চাইছেন, যখন হলে যাওয়ার এত আগ্রহ, তখন কেন দেখা মিলছে না কাঙ্ক্ষিত টিকিটের? তাদের প্রশ্ন—এই সঙ্কট কি পরিকল্পনার ঘাটতি, না কি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ‘চাহিদা বাড়ানোর’ খেলা?
বাংলা সিনেমার এই জাগরণ কি নতুন ইতিহাসের সূচনা করছে? তা সময়ই বলে দেবে। তবে এখনই এটা স্পষ্ট—দেশীয় কনটেন্ট নিয়ে মানুষের আগ্রহ ফিরেছে, আর সেই আগ্রহকে অবহেলা নয়, বরং শ্রদ্ধা করে এগিয়ে যাওয়ার সময় এখনই।
Leave a comment