চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসে গড়ে ওঠা গোপন মদ তৈরির কারখানা উন্মোচন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। জীববিজ্ঞান অনুষদের পেছনে গ্রীনহাউস এলাকার ব্রিজের উত্তর পাশে একটি টিনঘরে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বাংলা মদ, মদ তৈরির সরঞ্জাম ও বন্যপ্রাণী শিকারের অস্ত্রসহ দুইজনকে আটক করা হয়েছে।
গত সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডির উদ্যোগে পরিচালিত এই অভিযানের নেতৃত্ব দেন প্রক্টর ড. হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং সহকারী প্রক্টর নুরুল হামিদ কানন। অভিযানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা টিম এবং পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরাও অংশ নেন।
জানা গেছে, সুমন চাকমা নামের একজন ব্যক্তি প্রায় ১৫ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের লিজ নেওয়া বখতিয়ার ফকিরস্থ জমিতে বসবাস ও কৃষিকাজ করছিলেন। তবে দীর্ঘদিন ধরেই ওই টিনঘরের পেছনে অবৈধভ বাংলা মদ তৈরি করতেন তিনি। তার বাড়ির পিছনের লম্বা বারান্দা জুড়ে ছিল একটি গোপন মদের কারখানা—যা সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা টিমের নজরদারিতে আসে
সহকারী প্রক্টর নুরুল হামিদ কানন জানান, জীববিজ্ঞান অনুষদ সংলগ্ন এলাকায় বহিরাগতদের অস্বাভাবিক উপস্থিতি এবং কয়েকজন শিক্ষার্থীর ঘন ঘন যাতায়াত তাদের সন্দেহ বাড়ায়। নিরাপত্তাকর্মীরা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ শুরু করলে দেখা যায়—রাতে বিভিন্ন ব্যক্তি ঐ ঘরে প্রবেশ করছে।
গোপনে কয়েক দফা রেকি করার পর সন্দেহ নিশ্চিত হলে সোমবার রাত ১২টা ২০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, নিরাপত্তা সুপারভাইজার নুরুদ্দীন–মহিউদ্দিনসহ ৭–৮ জনের একটি দল ঘরটি ঘিরে ফেলে। পরে ভেতর থেকে সুমন চাকমা এবং তার সঙ্গে থাকা এক নারীকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সুমন জানান, ওই নারী তার স্ত্রী নন।
অভিযানকারীরা ঘরের পেছনে থাকা কারখানা থেকে প্রায় ৩০ লিটার সদ্য প্রস্তুত গরম বাংলা মদ, ৫ লিটার ডেক্সি, বোতলজাত প্রস্তুত মদ, চুলা, ড্রামসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করেন।এ ছাড়া নিয়মিত মদ বিক্রির হিসাব সংবলিত একটি নোটবুকও উদ্ধার করা হয়, যা থেকে বোঝা যায়—এটি ছিল পরিকল্পিতভাবে পরিচালিত একটি অবৈধ ব্যবসা।
অভিযানে আরও জানা যায়, সুমন চাকমা শুধু মদই প্রস্তুত করতেন না, বরং দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাহাড়ি জঙ্গল থেকে বন্য শুকর, হরিণ, বন্য মুরগিসহ বিভিন্ন প্রাণী শিকার করতেন।
এগুলোর মাংস স্থানীয়ভাবে ও ব্যক্তিগত যোগাযোগে বিক্রি করতেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ক্যাম্পাসের কিছু শিক্ষার্থীও নিয়মিত তার কাছ থেকে মদ কিনতো। সন্দেহজনকভাবে ওই এলাকায় যাতায়াতকারী কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
সহকারী প্রক্টর নুরুল হামিদ কানন বলেন—“লিজকৃত জমিতে অবৈধভাবে মদের কারখানা চালানোর অভিযোগে সুমন চাকমার লিজ বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এছাড়া অনুমতিহীনভাবে গাছ কাটার প্রমাণ পাওয়ায় তাকে আর্থিক জরিমানার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।” তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে অবৈধ কার্যক্রম চালানো হলেও সুমন দক্ষতার সঙ্গে বিষয়টি গোপন রেখে আসছিলেন।
অভিযানে বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনস্পেক্টর মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে একটি পুলিশ দল সহযোগিতা করে। পরবর্তীতে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সমস্ত আলামত সংগ্রহ করে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন এবং অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে সুমনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
চবি প্রক্টরিয়াল বডি জানিয়েছে, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ও শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার স্বার্থে ভবিষ্যতে এ ধরনের অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে আরও কঠোর অভিযান চালানো হবে। প্রক্টর ড. সোহরাওয়ার্দী বলেন—“বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে কোনো অপরাধমূলক কার্যকলাপ চলতে দেওয়া হবে না। ক্যাম্পাসকে অপরাধমুক্ত রাখতে নিয়মিত নজরদারি বাড়ানো হবে।”
Leave a comment