চট্টগ্রাম রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) অবস্থিত দুটি রফতানিমুখী কারখানায় লাগা ভয়াবহ আগুন প্রায় ১৭ ঘণ্টার চেষ্টার পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। শুক্রবার সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও পুরোপুরি নির্বাপণ করতে আরও সময় লাগবে। এখনো ঘটনাস্থলে ১৭টি ইউনিট আগুনের বাকি অংশ নিভিয়ে ফেলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
আগুনের সূত্রপাত হয় বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) দুপুর ২টার দিকে।
সিইপিজেডের অ্যাডামস ক্যাপস অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড এবং জিহং মেডিকেল কোম্পানি—এই দুটি কারখানার গুদাম থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভবনে। দাহ্য পদার্থ মজুদ থাকায় মুহূর্তেই আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
ফায়ার সার্ভিসের ২৩টি ইউনিটের পাশাপাশি বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর দুটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়। পরে সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরাও সহায়তা করেন। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের রোবটিক ফায়ার ফাইটিং ইউনিটও ব্যবহার করা হয়—যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাইপ দিয়ে পানি ছিটিয়ে আগুন নেভানোর কাজ করে।
ফায়ার সার্ভিসের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ভবনের সর্বোচ্চ তলায় অবস্থিত গুদাম থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়। সিইপিজেড সূত্রে জানা যায়, অ্যাডামস ক্যাপস অ্যান্ড টেক্সটাইল মূলত তোয়ালে ও ক্যাপ উৎপাদন করে, আর জিহং মেডিকেল কোম্পানিতে তৈরি হতো সার্জিক্যাল গাউন ও চিকিৎসা সরঞ্জাম। উভয় কারখানাতেই প্রচুর দাহ্য কাপড় ও রাসায়নিক পদার্থ থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট অথবা গুদামে সংরক্ষিত দাহ্য পদার্থের তাপীয় বিক্রিয়া থেকেই আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে কর্মরত শ্রমিকদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয় বলে নিশ্চিত করেছেন সিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আবদুস সুবাহান।
তিনি বলেন, “আগুনের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জরুরি উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়। কোনো শ্রমিক বা কর্মচারীর হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। নৌবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের ফায়ার ফাইটার ইউনিট সমন্বিতভাবে কাজ করছে।”
আগুন লাগার সময় ঘটনাস্থলে থাকা জিহং মেডিকেল কোম্পানির শ্রমিক মোছা. শিপা জানান, “আমরা তখন দুপুরের খাবার খেয়ে কাজে ফিরেছি। হঠাৎ ওপর থেকে ‘আগুন, আগুন’ চিৎকার শুনে সবাই নিচে দৌড়ে নামি। যে জায়গা থেকে আগুনের সূত্রপাত, সেখানে সাধারণত নারীদের যাওয়া নিষেধ।”
ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জামির হোসেন জিয়া জানান, “আগুন লাগার খবর পেয়ে শ্রমিকরা আতঙ্কে ভবন থেকে নামতে শুরু করেন। বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের মধ্যে কিছুটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। তবে গুরুতর আহত হওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।” তিনি আরও বলেন, “ফায়ার সার্ভিসের দ্রুত তৎপরতা ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় বড় ধরনের প্রাণহানি বা বিস্ফোরণ এড়ানো গেছে।”
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, আগুন নেভাতে একটানা কাজ করেছেন প্রায় ৩০০ জন কর্মী। রাতভর আগুন নেভানোর কাজ চলে। ভেতরে প্রচুর দাহ্য পদার্থ থাকায় বারবার আগুন জ্বলে ওঠে। এজন্য রোবট ইউনিট ব্যবহার করা হয় যাতে ভেতরে প্রবেশ না করেই আগুনে পানি ছিটানো যায়।
রাতভর অভিযান শেষে শুক্রবার সকালে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে কারখানার গুদাম ও উৎপাদন ইউনিটের বড় অংশ পুড়ে গেছে।
প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, ক্ষতির পরিমাণ দশ কোটি টাকার বেশি হতে পারে। আগুনের কারণ ও আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে ফায়ার সার্ভিস ও ইপিজেড কর্তৃপক্ষের যৌথ তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম ইপিজেডের এই অগ্নিকাণ্ড শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। যদিও দ্রুত তৎপরতায় বড় ধরনের প্রাণহানি এড়ানো গেছে, তবে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি ও কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় রপ্তানি খাতের ওপর প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সিইপিজেড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগুন পুরোপুরি নিভে গেলে এবং ক্ষয়ক্ষতির হিসাব সম্পন্ন হওয়ার পর প্রভাবিত কারখানাগুলোর কার্যক্রম পুনরায় চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
Leave a comment