চট্টগ্রামের উপকূলে মাছ ধরার ট্রলারডুবির ঘটনায় নিখোঁজ আট জেলের মধ্যে দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার (৯ আগস্ট) বিকেলে পতেঙ্গা সড়কের ১৮ নম্বর ঘাট এলাকা থেকে মরদেহ দুটি উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ।
নিহতরা হলেন—আবুল কালাম ও ইদ্রিস। চট্টগ্রাম সদরঘাট নৌ-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আরিফ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে মরদেহ দুটি উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, “বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে। বাকি নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারে অভিযান চলছে।”
ট্রলারডুবির এ ঘটনা ঘটে বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) দুপুরে। সেদিন দুপুর ১২টার দিকে নগরের ফিশারিঘাট এলাকা থেকে ‘আনিকা’ নামের মাছ ধরার ট্রলারটি ১৯ জন জেলেকে নিয়ে গভীর সাগরে মাছ ধরতে যায়। রেডকিন পয়েন্ট অতিক্রমের প্রায় ১০ মিনিট চলার পর ট্রলারটি অপর একটি নৌযানের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ডুবে যায়।
দুর্ঘটনার পর নিকটবর্তী একটি নৌযান ঘটনাস্থলে পৌঁছে ১১ জন জেলেকে জীবিত উদ্ধার করে। তবে আটজন জেলে নিখোঁজ ছিলেন। ঘটনার পরপরই কোস্টগার্ড এবং নৌ-পুলিশ উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে।
স্থানীয় জেলেরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার সময় সাগরে ঢেউ তুলনামূলক কম ছিল, তবে ধাক্কাটি এতই প্রবল ছিল যে ট্রলারটি দ্রুত উল্টে যায় এবং কয়েক মিনিটের মধ্যে পানিতে তলিয়ে যায়। জেলেদের মধ্যে অনেকে সাঁতরে নৌকার কাছে পৌঁছাতে পারলেও কয়েকজন আর উঠে আসতে পারেননি।
কোস্টগার্ডের চট্টগ্রাম স্টেশনের কর্মকর্তারা জানান, নিখোঁজ বাকি ছয়জন জেলের সন্ধানে তল্লাশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তারা সাগরের ভাসমান এলাকা, উপকূলবর্তী স্থানে এবং সম্ভাব্য ভাটার স্রোতের দিকে নজর রেখে অনুসন্ধান চালাচ্ছেন। উদ্ধার কাজে নৌযান, ডাইভার এবং আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করা হচ্ছে।
নিহতদের মরদেহ শনাক্ত করার পর আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারগুলোর কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এই দুর্ঘটনা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে শোকের পাশাপাশি ক্ষোভও দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সমুদ্রে নৌযান চলাচলে পর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় এ ধরনের দুর্ঘটনা বারবার ঘটছে। অনেক ক্ষেত্রে নৌযানগুলোর লাইসেন্স ও সুরক্ষা সরঞ্জাম ঠিকভাবে পরীক্ষা করা হয় না, যা জেলেদের জন্য জীবনহানির ঝুঁকি বাড়ায়।
চট্টগ্রামের মৎস্যঘাট এলাকায় জেলে সংগঠনের এক নেতা বলেন, “আমরা বহুবার অনুরোধ করেছি যে গভীর সাগরে যাওয়ার আগে প্রতিটি ট্রলারে লাইফ জ্যাকেট, লাইফ বয়া এবং রেডিও যোগাযোগ ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা হোক। কিন্তু তদারকির অভাবে এসব নিয়ম মানা হয় না।”
প্রশাসন জানিয়েছে, ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত করা হবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে সাগরপথে নৌযান চলাচলের নিরাপত্তা জোরদার করা হবে।
বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা বাংলাদেশের বহু উপকূলীয় পরিবারের জীবিকার প্রধান উৎস হলেও প্রতিনিয়ত ট্রলারডুবি, ঝড় এবং নৌযান সংঘর্ষে জেলেদের প্রাণহানি ঘটে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক প্রশিক্ষণ, উন্নত প্রযুক্তি ও কঠোর নৌযান নিয়ন্ত্রণ নীতি প্রয়োগ করা গেলে এসব দুর্ঘটনা অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব।
চট্টগ্রামের এই ট্রলারডুবি আবারও মনে করিয়ে দিল, সমুদ্রপথে জীবিকার জন্য ঝুঁকি নেওয়া মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এখন সময়ের দাবি।
 
                                                                         
                                                                         
                             
                             
                                 
			             
			             
 
			         
 
			         
 
			         
 
			         
				             
				             
				            
Leave a comment