১৫৮২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি, সময়ের হিসাবরক্ষায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনেন তৎকালীন পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি। তাঁর আদেশে প্রবর্তিত হয় গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জী, যা পরবর্তীতে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ব্যবহৃত হয় এবং আজও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড হিসেবে গণ্য হয়। সময়ের সূক্ষ্ম বিচারে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে এই সংস্কার ছিল ইতিহাসে এক বৈপ্লবিক পদক্ষেপ।
পূর্ববর্তী জুলিয়ান বর্ষপঞ্জীর হিসাবে একটি বছর ধরা হতো ৩৬৫.২৫ দিন, কিন্তু প্রকৃত সৌর বছরের দৈর্ঘ্য ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৯ মিনিট ১২ সেকেন্ড। এই পার্থক্য প্রতি ৪০০ বছরে প্রায় ৩ দিনের গড়পড়তা বিচ্যুতি তৈরি করত। এই গড়পড়তা গড়িয়েই ত্রয়োদশ গ্রেগরির সময়ে গিয়ে ১০ দিনের ফারাক তৈরি হয়। ২১ মার্চ তারিখে পড়ার কথা থাকা মহাবিষুব তখন ১১ মার্চে এসে পৌঁছায়। খ্রিস্টীয় ধর্মানুষ্ঠান, বিশেষ করে ইস্টারের তারিখ নির্ধারণে এই বিচ্যুতি বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এই সমস্যা সমাধানে পোপের নিযুক্ত চিকিৎসক ও জ্যোতির্বিদ অ্যালয়সিয়াস লিলিয়াস একটি গাণিতিক পঞ্জিকা সংস্কারের প্রস্তাব দেন। সেই প্রস্তাব সামান্য সংশোধনের মাধ্যমে গৃহীত হয় এবং গঠিত হয় নতুন সৌর পঞ্জিকা—গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জী। এই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রতি চার বছরে একটি অধিবর্ষ ধরা হয়, তবে শতবর্ষ হলে তা অধিবর্ষ হবে কেবল তখনই যদি সংখ্যাটি ৪০০ দ্বারা বিভাজ্য হয়।
গ্রেগরীয় পঞ্জিকা প্রথমে গ্রহণ করে রোমান ক্যাথলিক দেশসমূহ। ইংল্যান্ড এবং তার উপনিবেশসমূহ, যার মধ্যে ছিল তখনকার আমেরিকাও, এটি গ্রহণ করে আরও অনেক পরে, ১৭৫২ সালের সেপ্টেম্বরে। তখন তারা জুলিয়ান বর্ষপঞ্জীর সময় হিসাব অনুযায়ী ১১ দিন বাদ দিয়ে দেয়—৩ সেপ্টেম্বরের পর সরাসরি ১৪ সেপ্টেম্বর যুক্ত হয় ক্যালেন্ডারে।
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জীর চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে সময়ের সুনির্দিষ্টতা, ধর্মীয় অনুষ্ঠানসূচি এবং বৈশ্বিক কার্যক্রমে একটি অভিন্ন ও বিজ্ঞানসম্মত কাঠামো প্রতিষ্ঠা পায়। আজ, শত শত বছর পরেও, পোপ গ্রেগরির এই পদক্ষেপ মানবসভ্যতার ইতিহাসে সময় গণনার এক অনন্য মাইলফলক হয়ে রয়েছে।
Leave a comment