ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হচ্ছে। গুরুতর আহত হাদিকে বহনের জন্য সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল ১১টা ২০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স অবতরণ করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রয়োজনীয় মেডিকেল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে দুপুর দেড়টার দিকে বিমানটি সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে অন্তর্বর্তী সরকার হাদির উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্তের কথা জানায়। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশের বাইরে বিশেষায়িত চিকিৎসা সুবিধা ও উচ্চতর নিউরোলজিক্যাল সাপোর্টের প্রয়োজন বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
চিকিৎসা সূত্রে জানা গেছে, শরিফ ওসমান হাদি বর্তমানে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই তার শারীরিক অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, হাদির ব্রেন স্টেমে আঘাত লেগেছে এবং তার মস্তিষ্ক অতিরিক্ত ফুলে গেছে, যা চিকিৎসকদের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, মস্তিষ্কে আঘাতের কারণে তার রক্তচাপ ওঠানামা করছে এবং হৃদযন্ত্রের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সার্বক্ষণিক মেডিকেল সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। সোমবার সকাল পর্যন্ত নতুন কোনো ইতিবাচক মেডিকেল আপডেট পাওয়া না গেলেও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাকে স্থানান্তরের উপযোগী করতে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে উন্নত লাইফ সাপোর্ট, নিউরোলজিস্ট এবং বিশেষায়িত মেডিকেল টিম থাকার কথা রয়েছে।
এভারকেয়ার হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, “এই ধরনের জটিল নিউরোলজিক্যাল কেসে সময় ও বিশেষায়িত চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সিঙ্গাপুরের নির্দিষ্ট কিছু মেডিকেল সেন্টারে উন্নত নিউরোসার্জিক্যাল ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার সুবিধা থাকায় সেখানে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
এদিকে হাদির ওপর হামলার ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ইনকিলাব মঞ্চ এই ঘটনাকে ‘গণতান্ত্রিক রাজনীতির ওপর সরাসরি হামলা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। সংগঠনের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের রোববার রাতে এক বিবৃতিতে জানান, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার না করা হলে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, “সোমবারের মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করতে ব্যর্থ হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করা হবে। পাশাপাশি রাষ্ট্রের ব্যর্থতার প্রতিবাদে আমরা রাজপথে নামতে বাধ্য হবো।”
ইনকিলাব মঞ্চের ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, সোমবার বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একটি সর্বদলীয় প্রতিরোধ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই সমাবেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। আয়োজকদের ভাষ্য, হামলার বিচার ও রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধের দাবিতে এই কর্মসূচি পালন করা হবে।
Leave a comment