বাংলা গানের জীবন্ত কিংবদন্তি সাবিনা ইয়াসমীনকে ঘিরে নির্মিত হয়েছে বিশেষ ডকুফিল্ম ‘জুঁই ফুল: সাবিনা ইয়াসমীন’। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে শ্রোতার হৃদয়ে অমর হয়ে থাকা এই শিল্পীর জীবনী, শিল্পযাত্রা ও সংগ্রামকে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে ডকুফিল্মটি নির্মাণ করেছেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর বিকেল ২টা ৪০ মিনিটে চ্যানেল আইয়ে এটি প্রচারিত হবে।
এর আগে চ্যানেল আই কার্যালয়ে একটি বিশেষ প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন সাবিনা ইয়াসমীন নিজেই। বিকেল পৌনে চারটার দিকে সবুজগালিচা বেয়ে চ্যানেল আই ভবনে প্রবেশ করেন তিনি। গাড়ি থেকে নামতেই ফুল দিয়ে তাঁকে বরণ করেন নির্মাতা শাইখ সিরাজ। প্রদর্শনীর সংক্ষিপ্ত সংস্করণ দেখতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন উপস্থিত সবাই। ডকুফিল্মে নিজের জীবনী উঠে আসায় বিস্মিত হয়ে সাবিনা ইয়াসমীন বলেন, “অনুভূতি প্রকাশ করার মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। শাইখ সিরাজ ভাই এত সুন্দর করে কাজটি করেছেন যে আমি অভিভূত।”
নির্মাতা শাইখ সিরাজ মনে করেন, সাবিনা ইয়াসমীন কেবল একজন শিল্পী নন, তিনি পুরো সংস্কৃতির ইতিহাস। তাঁর সংগ্রাম, অর্জন, সৃষ্টিশীলতা ও ব্যক্তিজীবনের নানা অধ্যায়কে ফুটিয়ে তুলতে সচেষ্ট হয়েছেন তিনি। তাঁর ভাষায়, “এটি শুধু একটি প্রামাণ্যচিত্র নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সাংস্কৃতিক দলিল।”
‘জুঁই ফুল’-এ স্থান পেয়েছে ষাটের দশক থেকে বর্তমান পর্যন্ত সাবিনা ইয়াসমীনের সংগীতযাত্রা। তুলে ধরা হয়েছে তাঁর শৈশব, প্রথম গান গাওয়ার স্মৃতি, ছোটবেলায় আলতাফ মাহমুদের হাত ধরে সিনেমায় সুযোগ পাওয়া থেকে শুরু করে দিলশাদ ইয়াসমীন থেকে বাংলা গানের সাবিনা ইয়াসমীন হয়ে ওঠার গল্প। একান্ত সাক্ষাৎকার, আর্কাইভাল ভিডিও, স্মৃতিচারণ, কালজয়ী গানের পরিবেশনা ও সমসাময়িক শিল্পীদের অংশগ্রহণে সমৃদ্ধ হয়েছে ডকুফিল্মটি।
মাত্র সাত বছর বয়সে প্রথমবার মঞ্চে গান করেন সাবিনা ইয়াসমীন। ১৯৬২ সালে রবীন ঘোষের সুরে ছোটদের জন্য গান গেয়ে সংগীতে আনুষ্ঠানিক প্রবেশ, একই বছরে এহতেশামের ‘নতুন সুর’ ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে গান করা এবং ১৯৬৭ সালে ‘আগুন নিয়ে খেলা’ চলচ্চিত্রে প্রথম প্লেব্যাকের মধ্য দিয়ে তিনি ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন বাংলা গানের অপরিহার্য কণ্ঠ।
এরপর থেকে সত্য সাহা, আলম খান, আলাউদ্দিন আলী, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলসহ কিংবদন্তি সুরকারদের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। গেয়েছেন মান্না দে, কিশোর কুমার, আশা ভোসলে, কুমার শানু, শ্যামল মিত্রের মতো শিল্পীর সঙ্গে। তাঁর কণ্ঠে পাঁচ হাজারের বেশি চলচ্চিত্রের গান অমর হয়ে আছে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন ১৪ বার, পেয়েছেন একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কার।
‘তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়’, ‘যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো’, ‘একবার যদি কেউ ভালোবাসতো’ কিংবা ‘সবার তো ভালোবাসা দরকার’—এসব গান আজও শ্রোতার হৃদয়ে বাজে। ২০২০ সালে প্রয়াত কবরীর ‘এই তুমি সেই তুমি’ চলচ্চিত্রে সর্বশেষ কণ্ঠ দেন তিনি। একই সঙ্গে প্রথমবার সুরকার হিসেবেও কাজ করেন চারটি গানে।
বাংলা গানের ইতিহাসে এক পূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকা সাবিনা ইয়াসমীনকে নিয়েই দর্শকের সামনে হাজির হচ্ছে ডকুফিল্ম ‘জুঁই ফুল’।
Leave a comment