গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে চলমান শান্তি আলোচনায় এবার কাতার ও তুরস্কও যোগ দিচ্ছে। বুধবার (৯ অক্টোবর) মিশরের শার্ম এল-শেখে হামাস ও ইসরায়েলি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী এবং তুরস্কের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল।
আলোচনাটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার ভিত্তিতে। আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র, মিশর, কাতার ও তুরস্ক একত্রে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে।
ওভাল অফিসে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “আমাদের সামনে সত্যিই একটি বড় সুযোগ রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। এটি শুধু গাজার নয়, গোটা অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছে এবং যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত হলে “চুক্তি বাস্তবায়নে সবাই যেন অঙ্গীকারবদ্ধ থাকে, তা নিশ্চিত করবে”।
৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের দ্বিতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনার সূচনা হয়েছে। ২০২৩ সালের সেই আক্রমণে ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা সংঘটিত হয়, যা থেকে শুরু হয় দীর্ঘস্থায়ী গাজা যুদ্ধ।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সংঘাতে ১,২১৯ জন ইসরায়েলি নিহত হন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। হামাস তখন ২৫১ জনকে জিম্মি করেছিল, যাদের মধ্যে ৪৭ জন এখনো বন্দি, আর ২৫ জন ইতোমধ্যে মারা গেছেন বলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে।
অন্যদিকে, গাজা নিয়ন্ত্রিত হামাসের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬৭,১৬০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘ জানিয়েছে, যুদ্ধের কারণে গাজা কার্যত বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে এবং অনেক এলাকায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে।
জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক তদন্তে গাজায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তোলা হয়েছে। অপরদিকে, মানবাধিকার সংস্থাগুলো হামাসকেও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ী করেছে। দুই পক্ষই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে ট্রাম্প প্রশাসন নতুন করে কূটনৈতিক উদ্যোগ নিয়েছে। মিশর, কাতার এবং তুরস্ককে এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে শান্তিচুক্তির “আঞ্চলিক গ্রহণযোগ্যতা ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে।”
হামাসের শীর্ষ আলোচক খলিল এল-হাইয়া বলেন, “আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও পৃষ্ঠপোষক দেশগুলোর কাছ থেকে এই নিশ্চয়তা চাই যে এই যুদ্ধ স্থায়ীভাবে শেষ হবে।”
ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে—
• অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা,
• সব জিম্মির মুক্তি,
• হামাসের নিরস্ত্রীকরণ, এবং
• ইসরায়েলি বাহিনীর ধাপে ধাপে গাজা থেকে প্রত্যাহার।
ইতিমধ্যে ইসরায়েল ও হামাস উভয় পক্ষই প্রাথমিকভাবে পরিকল্পনার প্রতি “ইতিবাচক সাড়া” দিয়েছে। সোমবার থেকে মিশরে শুরু হওয়া আলোচনায় হামাস প্রতিনিধি দল জিম্মি-বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়া ও ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের মানচিত্র নিয়ে আলোচনা করেছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি সূত্র।
মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তি জানিয়েছেন, মার্কিন প্রতিনিধি জেসন উইটকফ ও জ্যারেড কুশনার বুধবার মিশরে পৌঁছাবেন এবং আলোচনা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন। তিনি বলেন, “এই পর্যায়ের সাফল্যের মূল গ্যারান্টি হলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে।”
কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান আল থানি বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন বলে কাতার সরকার নিশ্চিত করেছে। অপরদিকে, তুরস্কের গোয়েন্দা প্রধান ইব্রাহিম কালিন মিশরে তুর্কি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন।
যুদ্ধবিরতি সফল হলে এটি শুধু গাজা নয়, বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি “নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়” সূচনা করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে অনেক পর্যবেক্ষক সতর্ক করে বলেছেন, বাস্তবায়নের পথে
এখনো বহু জটিলতা রয়েছে, বিশেষ করে হামাসের অস্ত্র সমর্পণ ও ইসরায়েলি বাহিনীর প্রত্যাহার প্রক্রিয়া নিয়ে। তবু, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই আলোচনাকে গাজায় শান্তি ফিরিয়ে আনার সম্ভাব্য প্রথম ধাপ হিসেবে দেখছে।
Leave a comment