ইসরাইলের সামরিক অভিযান যখন গাজার জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলছে, তখন ভারত তার কূটনৈতিকঅবস্থান স্পষ্ট করেছে। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে ইসরাইলি হামলার সরাসরি নিন্দা না থাকলেও, জিম্মিদের মুক্তির আহ্বান জানানো হয়েছে। এর ফলে, ভারত যে কার্যত ইসরাইলের পাশেই দাঁড়িয়েছে, এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
গাজার মানবিক সংকট যখন তীব্রতর হচ্ছে তখন ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, ভারত এই পরিস্থিতি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। মূলত গাজায় আটকে থাকা জিম্মিদের মুক্তির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মানবিক সহায়তার প্রসঙ্গ উত্থাপন করলেও, ইসরাইলের হামলা সম্পর্কে সরাসরি কোনো সমালোচনা করা হয়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের এই অবস্থান মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সঙ্গে তার কৌশলগত সম্পর্ক রক্ষার একটি প্রচেষ্টা। ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভারত-ইসরাইল সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে ঘনিষ্ঠ হয়েছে। প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি এবং বাণিজ্যিক ক্ষেত্রেও উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমশ মজবুত হয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ২০১৭ সালে মোদি ইসরাইল সফর করেন, যা ছিল কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রথম সরকারি সফর। এর পর থেকে দু’দেশের কৌশলগত সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে।
বিশ্ব রাজনীতিতে মোদি-নেতানিয়াহু-ট্রাম্প (পূর্বতন মার্কিন প্রেসিডেন্ট) জোটকে এক প্রভাবশালী ত্রিভুজ হিসেবে দেখা হয়, যা মূলত ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী আদর্শের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এই ত্রয়ীর মধ্যে রাজনৈতিক সমর্থন প্রায়শই সমন্বিত থাকে। ভারত সরকারের সাম্প্রতিক বিবৃতি সেই প্রবণতারই বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারতের সরকার যখন ইসরাইলের প্রতি কূটনৈতিকভাবে সমর্থন জ্ঞাপন করছে, তখন বিরোধী দল কংগ্রেস সরাসরি ইসরাইলের সমালোচনায় সরব হয়েছে। কংগ্রেস নেত্রী ও সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ইসরাইলের সামরিক অভিযানকে ‘ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা’ বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, “ইসরাইলের সরকার ১৩০ জন শিশুসহ ৪০০ নিরীহ বেসামরিক নাগরিককে হত্যার মাধ্যমে প্রমাণ করেছে যে, মানবতা তাদের কাছে কোনো মূল্য রাখে না।” প্রিয়াঙ্কা আরও বলেন, “পশ্চিমা বিশ্ব ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে চালানো গণহত্যাকে স্বীকার করুক বা না করুক, বিশ্বের বিবেকবান মানুষ এটা স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছে।”
বিভিন্ন ভারতীয় মানবাধিকার সংস্থা এবং নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকেও গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা হচ্ছে। দিল্লি, মুম্বাই ও কলকাতায় বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে মানবতার পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানানো হয়েছে।
গাজায় ইসরাইলি হামলা ও এর প্রতিক্রিয়ায় ভারতের অবস্থান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কূটনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বিজেপি সরকার ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার নীতি গ্রহণ করলেও, দেশের বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজ ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে। ভারতের এই দ্বৈত অবস্থান আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তার কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখার প্রয়াস বলে মনে করা হচ্ছে। তবে, মানবিক সংকটের এ সময়ে ভারতের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক থাকছেই।
Leave a comment