পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের কুররাম জেলায় চলমান খাদ্য সংকট রমজান মাসে আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। টানা পাঁচ মাস ধরে চলা অবরোধের ফলে অঞ্চলটির মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। ইফতারের জন্য খেজুর পর্যন্ত মিলছে না, আর সেহরিতে অধিকাংশ মানুষ চা-রুটি খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
কুররাম জেলার সদর দপ্তর পারাচিনারে রাস্তা বন্ধের প্রতিবাদে চলমান বিক্ষোভ তৃতীয় দিনে প্রবেশ করেছে। প্রাদেশিক সরকারের কাছে দ্রুত পরিবহন রুট খুলে দেওয়া ও জনগণের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলন করছেন স্থানীয়রা।
বিবিসি উর্দুর খবরে বলা হয়েছে, পারাচিনার ও আশপাশের ছোট ছোট গ্রামগুলো বিগত পাঁচ মাস ধরে পাকিস্তানের অন্যান্য অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। ফলে খাদ্যসহ মৌলিক প্রয়োজনীয় জিনিসের সংকট তীব্র হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, রমজান শুরু হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়েছে। ইফতারের জন্য খেজুরের দেখা মিলছে না, ফলে অধিকাংশ মানুষ শুধু চা-রুটি খেয়েই সেহরি ও ইফতার সারছেন।
যদিও খাইবার পাখতুনখোয়া সরকার খাদ্য ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে কনভয় পাঠানোর চেষ্টা করেছে, তবে বারবার হামলার কারণে ত্রাণ কার্যক্রম থমকে গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খাদ্য সংকটের পাশাপাশি জ্বালানি সরবরাহও ব্যাহত হয়েছে। পাঁচ মাস ধরে কুররামে পেট্রোল ও ডিজেলের সংকট চলছে। রমজান মাসে কালোবাজারে লিটারপ্রতি পেট্রোলের দাম ১,০০০ থেকে ১,৫০০ রুপিতে পৌঁছেছে, তাও সীমিত পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে।
একজন স্থানীয় সমাজকর্মী মুসারাত বাঙ্গাশ বলেন, ‘মানুষ এখন ভাবছে, এই অবস্থা চলতে থাকলে তারা হয় মারা যাবে, নয়তো চরম পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে। সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ।’
তিনি আরও জানান, আগে রমজানে তার বাড়িতে বড় ইফতার আয়োজন হতো, যেখানে সবাই মিলে খেতে বসতেন। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। এখন চায়ের সঙ্গে রুটি খেয়ে সেহরি ও ইফতার সারতে হচ্ছে। গরিব মানুষের জন্য তো খাবার পাওয়াই কঠিন হয়ে গেছে। গত তিন দিন ধরে চলা বিক্ষোভের এক অংশগ্রহণকারী মালিক জারতাজ বলেন, ‘প্রতিদিন আমাদের বলা হচ্ছে, আজ রাস্তা খুলবে, কাল খুলবে। কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। সরকার যদি আমাদের দুর্ভোগ লাঘব করতে না পারে, তবে আমাদের বিক্ষোভ চলবে।’
পারাচিনারের সিনিয়র সাংবাদিক আলী আফজালের মতে, রমজান শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কুররামের জনগণের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। তার মতে, এ অঞ্চলে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর সংকট এখন চরমে পৌঁছেছে, যা জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।
Leave a comment