২০২৫ সালের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এবারের পরীক্ষায় গড় পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম। তবে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, দেশের ২০২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীই পাস করতে পারেনি।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল পৌনে ১০টার দিকে দেশের সব শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে একযোগে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ফল প্রকাশের পর এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. খন্দোকার এহসানুল কবির।
প্রফেসর এহসানুল কবির জানান, গত বছর (২০২৪ সালে) শতভাগ ফেল করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৬৫টি। চলতি বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০২টিতে। তিনি বলেন, “এই পরিসংখ্যান আমাদের জন্য উদ্বেগের। ফলাফলে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোরও দায় রয়েছে। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত না হলে এ ধরনের প্রবণতা বাড়বে।”
দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ড— ঢাকা, রাজশাহী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, যশোর, বরিশাল, সিলেট, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, মাদ্রাসা ও কারিগরি— থেকে এবারের ফল প্রকাশ করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা আগের মতোই তিনটি উপায়ে ফলাফল জানতে পারবেন:
১. অনলাইনে: www.educationboardresults.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে বোর্ডের নাম, রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্রবেশ করিয়ে ফলাফল দেখা যাবে।
২. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে: নিজ নিজ কলেজ বা পরীক্ষা কেন্দ্র থেকেও ফল জানা যাবে।
৩. এসএমএসে: মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে লিখতে হবে —
HSC <space> বোর্ডের প্রথম তিন অক্ষর <space> রোল <space> বছর
তারপর পাঠাতে হবে 16222 নম্বরে।
যেসব শিক্ষার্থী প্রাপ্ত ফলাফলে অসন্তুষ্ট, তারা ১৭ অক্টোবর থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত ফলাফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করতে পারবেন। আবেদন করতে হবে অনলাইনে — https://rescrutiny.eduboardresults.gov.bd ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। কোনো শিক্ষা বোর্ড বা অফিসে সরাসরি আবেদন গ্রহণ করা হবে না।
চলতি বছর মোট ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করেন। তাদের মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন প্রায় ১২ লাখ ২৪ হাজার শিক্ষার্থী।
শিক্ষাবিদদের মতে, শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগই প্রত্যন্ত অঞ্চলের বেসরকারি কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের ঘাটতি, উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশের অভাব ও শিক্ষার্থীদের অনিয়মিত পাঠদানকে প্রধান কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, সরকার ও শিক্ষা বোর্ডগুলোর উচিত হবে এইসব প্রতিষ্ঠানের অবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করে “পুনর্গঠনমূলক পদক্ষেপ” নেওয়া। অন্যদিকে, শিক্ষক প্রশিক্ষণ জোরদার করা ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
প্রাথমিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে এবারও রাজশাহী ও কুমিল্লা বোর্ডে তুলনামূলক ভালো ফলাফল এসেছে। অপরদিকে সিলেট ও দিনাজপুর বোর্ডে পাসের হার কম। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার প্রায় ৬১ শতাংশ, আর মাদ্রাসা বোর্ডে ৫৫ শতাংশের নিচে।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গড় পাসের হার কিছুটা কমলেও উচ্চতর জিপিএ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা আগের বছরের কাছাকাছি রয়েছে। তবে ২০২টি প্রতিষ্ঠানের শূন্য পাসের ঘটনা শিক্ষাক্ষেত্রে মানের সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ফেল করা প্রতিষ্ঠানগুলো চিহ্নিত করে কারণ অনুসন্ধান ও ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
Leave a comment