বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মতপার্থক্য ও তর্ক-বিতর্ক থাকবেই, তবে তা যখন জনগণের মৌলিক অধিকার ও প্রগতিশীল চিন্তাভাবনাকে বিভ্রান্ত করার পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তখন সমাজে হতাশা তৈরি হয়। আজ শনিবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত ‘সামাজিক সুরক্ষা কতটা সুরক্ষিত?’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি আশাবাদী থাকতে চান, কিন্তু বাস্তবতায় হতাশা এড়ানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তাঁর ভাষায়, “আমি যখন একটি প্রগতিশীল সমাজের স্বপ্ন দেখি, যেখানে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, বৈষম্য কমবে, সেখানে দেখি উল্টোভাবে মানুষের চিন্তাভাবনাকে বিকৃত করার চেষ্টা চলছে। একটি উগ্রবাদ ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা স্বাভাবিকভাবেই হতাশার জন্ম দেয়।”
তিনি মনে করেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে কেবল অস্থায়ী উদ্যোগ যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন রাষ্ট্রকাঠামোয় গভীর সংস্কার। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান কিংবা কৃষি—এসবকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখা যাবে না, বরং সমন্বিতভাবে এগোতে হবে। আর এসব নির্ভর করে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা কেমনভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন তার ওপর।
বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ দেশকে সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। তাঁর দাবি, প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসপ্রায়, আর এক দেড় বছরের মধ্যে তা পূর্ণাঙ্গভাবে পুনর্গঠন করা সম্ভব নয়। দেশের রাজনৈতিক সংকটের অন্যতম কারণ হিসেবে তিনি ভয়াবহ দুর্নীতির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানের কাজ সংসদ সদস্যরা নিয়ে নিয়েছেন। আইন প্রণয়নের বদলে তাঁরা সড়ক নির্মাণ, ভবন সংস্কার কিংবা গাড়ি কেনার মতো বিষয় নিয়েই ব্যস্ত থেকেছেন। এভাবে পুরো রাষ্ট্রীয় সিস্টেম দখল হয়ে গেছে।
আমলাতন্ত্রের সমালোচনা করে তিনি বলেন, দেশে সবকিছু এখন আমলাদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। অনেক ক্ষেত্রেই উপদেষ্টারাও অসহায় হয়ে পড়ছেন। একজন মফস্সলের শিক্ষককে সমস্যা সমাধানের জন্য ঢাকায় ছুটতে হয়, অথচ এমন হওয়া উচিত ছিল না। কিন্তু ঘুষপ্রথা এমনভাবে গড়ে উঠেছে যে শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে নার্স নিয়োগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পদায়ন—সবখানেই ঘুষ প্রাধান্য পাচ্ছে।
আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, অর্থনীতিবিদ এম মাসরুর রিয়াজ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ এবং সাবেক সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার রানু। সভাটি সঞ্চালনা করেন আয়োজক সংগঠন অর্পণ আলোক সংঘের চেয়ারম্যান বীথিকা বিনতে হোসাইন।
মির্জা ফখরুলের মতে, সামাজিক সুরক্ষা শুধু স্লোগানে সীমিত রাখলে হবে না; প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও লক্ষ্য। আর উগ্রবাদ ও বিভ্রান্তির রাজনীতি ছড়িয়ে দিলে সমাজে স্থায়ী হতাশার জন্ম হবে, যা কোনো রাষ্ট্রের জন্যই কল্যাণকর নয়।
Leave a comment