ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, দুনিয়ায় কোনো মহৎ আদর্শ কখনোই সহজে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যেমন প্রতিটি নবীকে বিরোধিতা ও কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে, তেমনি ইসলাম প্রতিষ্ঠার পথেও এসেছে ত্যাগ ও রক্তের ইতিহাস। এই পথে সর্বপ্রথম প্রাণ উৎসর্গকারী ছিলেন মহান সাহাবি হজরত হারেস ইবনে আবি হালাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু)।
🕋 নাম ও পরিচয়
হজরত হারেস (রা.) ছিলেন উম্মুল মুমিনিন হজরত খাদিজা (রা.)-এর প্রথম স্বামী আবি হালাহ ইবনে যারারাহ-এর সন্তান। অর্থাৎ তিনি ছিলেন নবী করিম (সা.)-এর সৎপুত্র ও পোষ্যপুত্র। ইসলামের প্রতি তাঁর আনুগত্য ও ভালোবাসা ছিল গভীর। নবুয়তের শুরুর দিকেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং প্রথম দিকের সাহাবিদের কাতারে ছিলেন।
🌙 ঘটনাটির সূচনা
নবুয়তের প্রথম যুগে ইসলাম প্রচার গোপনে চলছিল। পরে হজরত ওমর (রা.) ইসলাম গ্রহণ করার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রকাশ্যে দাওয়াত শুরু করেন। একদিন নবী করিম (সা.) কাবা প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে বললেন—
“হে কুরাইশ! বলো— লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।”
এই আহ্বানে উপস্থিত মুশরিকদের অন্তর জ্বলে ওঠে। তারা চিৎকার করতে থাকে— “এটা আমাদের দেবদেবীর অবমাননা!” মুহূর্তেই কাবার চারপাশে শোরগোল পড়ে যায়, নবীজিকে ঘিরে ধরে তারা।
⚔️ নবীজির বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়েন হারেস (রা.)
এই সময় নিজের ঘরে থাকা হজরত হারেস (রা.) কাবা প্রাঙ্গণ থেকে হৈচৈ শুনে দৌড়ে চলে আসেন। তিনি দেখেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে ঘিরে ধরেছে একদল উত্তেজিত মুশরিক। কোনো দ্বিধা না করে তিনি নবীজির সামনে এসে দাঁড়ান। নবীজিকে রক্ষা করতে গিয়ে তিনি নিজেকে ঢাল বানিয়ে ফেলেন।
💔 শাহাদাত
পাপিষ্ঠ মুশরিকরা ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। একের পর এক আঘাতে রক্তাক্ত হয়ে পড়েন হজরত হারেস (রা.)। তবুও তিনি এক পা পিছাননি। অবশেষে তিনি শাহাদাতবরণ করেন, নিজের প্রাণ উৎসর্গ করেন নবীজির সুরক্ষার জন্য।
“ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।”
এইভাবেই তিনি ইসলামের পথে প্রথম শহীদ পুরুষ হিসেবে ইতিহাসে অমর হয়ে রয়েছেন।
🌺 তাঁর স্মরণে
হজরত হারেস ইবনে আবি হালাহ (রা.)- মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসে চিরস্মরণীয় এক ত্যাগের দৃষ্টান্ত। তিনি শেখালেন— সত্য ও ন্যায়ের জন্য নিজের জীবন বিসর্জনই প্রকৃত ঈমানের প্রকাশ। আল্লাহ তাআলা তাঁকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করুন, আর তাঁর ঈমান, সাহস ও ত্যাগের চেতনা আমাদের হৃদয়ে স্থায়ী করুন।
আমিন।
Leave a comment