ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বড় পরিসরে সামরিক অভিযান শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে চালানো এ হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৩১ জন নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় রোববার ভোর পর্যন্ত হামলা অব্যাহত ছিল।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় ফেরার পর এটিই মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বড় সামরিক অভিযান। মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হুতিদের বিরুদ্ধে এ সামরিক অভিযান কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতে পারে।
হুতিরা ইয়েমেনের একটি সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী, যারা দেশটির রাজধানী সানাসহ বেশির ভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ১৯৯০-এর দশকে গোষ্ঠীটির আত্মপ্রকাশ হলেও তারা ২০১৪ সালে ব্যাপক আলোচনায় আসে, যখন তারা ইয়েমেনের রাজধানী সানা দখল করে এবং তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আবদরাব্বু মনসুর হাদিকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করে।
২০১৫ সালে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট হুতিদের দমন করতে সামরিক অভিযান শুরু করে, যেখানে পশ্চিমা দেশগুলো সৌদিকে সমর্থন দেয়। কিন্তু ইরানের মদদপুষ্ট হুতিদের দমন করতে তারা ব্যর্থ হয়। ২০২২ সালে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় এবং সৌদি আরব ও ইয়েমেনের মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু হয়।
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজাভিত্তিক হামাস ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায়, যার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজায় ভয়াবহ সামরিক অভিযান শুরু করে। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে হুতিরা ওই বছরের নভেম্বরে লোহিত সাগরে ইসরায়েল-সংশ্লিষ্ট জাহাজে হামলা চালায়।
গাজায় সাময়িক যুদ্ধবিরতির পর হুতিরা এসব হামলা বন্ধ করেছিল। তবে ১ মার্চ যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পরিস্থিতি আবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, হুতিরা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি তৈরি করছে, তাই তাদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালানো হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে হুতিদের রাজনৈতিক ব্যুরো। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, এই আগ্রাসনের উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে এবং তাদের সশস্ত্র বাহিনী প্রতিরোধের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় এই হামলার ফলে আরও বড় সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ ইয়েমেনসহ পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
Leave a comment