পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অবস্থান ও বর্তমান স্বাস্থ্যগত পরিস্থিতি নিয়ে দেশজুড়ে জোরালো গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার মৃত্যু বা কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। তবে এ বিষয়ে পাকিস্তান সরকার, কারা কর্তৃপক্ষ কিংবা পরিবার—কেউই স্পষ্ট কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি। পরিবার জানিয়েছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে ইমরানের সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না।
এই অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) তার খোঁজ ও স্বচ্ছ তথ্য প্রকাশের দাবিতে রাওয়ালপিন্ডিতে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে।
দলটির নেতারা বলছেন, ইমরান খান আদিয়ালা কারাগারে আটক থাকলেও তার অবস্থান, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে গোপনীয়তা রক্ষা করছে।
পিটিআইয়ের বিক্ষোভ ঠেকাতে রাওয়ালপিন্ডির স্থানীয় প্রশাসন শহরে ১ থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেছে। এর ফলে এ সময়ের মধ্যে যেকোনো ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা, বিক্ষোভ, জনসভা কিংবা পাঁচজনের বেশি মানুষের জমায়েত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
রাওয়ালপিন্ডির ডেপুটি কমিশনার হাসান ওয়াকার চীমা এক সরকারি আদেশে জানান, জনশৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ঘোষণায় স্পষ্ট বলা হয়েছে—
• অস্ত্র, ভারী লাঠি, গুলতি, বল-বিয়ারিং, পেট্রোল বোমা বা সহিংসতায় ব্যবহৃত হতে পারে এমন কোনো সরঞ্জাম বহন করা যাবে না।
• অস্ত্র প্রদর্শন নিষিদ্ধ (আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বহন করা অস্ত্র ব্যতীত)।
• বিদ্বেষমূলক, উসকানিমূলক বা আপত্তিকর বক্তব্য দেওয়া যাবে না।
• পুলিশের আরোপ করা যেকোনো নিষেধাজ্ঞা অপসারণের চেষ্টা আইনত দণ্ডনীয় হবে।
• মোটরসাইকেলের পেছনে অতিরিক্ত আরোহী বহন করা যাবে না।
• মাইক্রোফোন বা লাউডস্পিকার ব্যবহার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ থাকবে।
প্রশাসনের দাবি, ১৪৪ ধারার এই কঠোর প্রয়োগ জননিরাপত্তা রক্ষা ও সম্ভাব্য সহিংসতা প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে।
ইমরান খানের সাথে দীর্ঘদিন দেখা করতে না পারায় তার পরিবারের মধ্যেও উদ্বেগ রয়েছে। পিটিআই নেতাদের ভাষ্য—ইমরানের আইনজীবী ও পরিবারের সদস্যরা বহুবার সাক্ষাতের আবেদন করলেও তা বারবার প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। পিটিআইয়ের এক জ্যেষ্ঠ নেতা অভিযোগ করেন, “সরকার ইমরান খানের স্বাস্থ্য নিয়ে স্পষ্ট তথ্য দিচ্ছে না। আমরা সন্দেহ করছি যে তাকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে এবং তার অবস্থা সম্পর্কে ইচ্ছাকৃতভাবে অন্ধকার রাখা হচ্ছে।” এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানে মানবাধিকার সংগঠনগুলোরও উদ্বেগ বাড়ছে।
২০২৩ সালের আগস্ট থেকে নানান মামলায় ইমরান খান রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দি রয়েছেন। তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ও পিটিআইয়ের কর্মকাণ্ড নিয়ে দেশটিতে তীব্র রাজনৈতিক অস্থিরতা চলমান।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইমরান খানের অবস্থান নিয়ে সরকারি নীরবতা এবং পিটিআইয়ের তীব্র প্রতিক্রিয়া পাকিস্তানের রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। ১৪৪ ধারা জারি ও বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা।
ইমরান খান জীবিত আছেন কি না—এ বিষয়ে পাকিস্তান সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষের অবস্থান এখনো অজানা। তার অবস্থান, বিক্ষোভ ঠেকাতে রাওয়ালপিন্ডিতে কঠোর বিধিনিষেধ এবং দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া গুঞ্জন—সব মিলিয়ে পাকিস্তানজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
Leave a comment