অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সম্প্রতি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে বলেছেন, “গণহত্যার বছর না ঘুরতেই আওয়ামী লীগকে ফেরানোর খায়েশ বিপজ্জনক।” পোস্টে তিনি আরও লিখেছেন, আমরা কবে থেকে জার্মানি, ইতালির থেকে বেশি ইনক্লুসিভ ডেমোক্রেটিক হয়ে গেলাম?
মাহমুদ এর বক্তব্য রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের বিষয়ে চলমান বিতর্ককে আরও তীব্র করেছে। তার মতে, আওয়ামী লীগকে ফেরানোর প্রচেষ্টা দেশের জন্য মারাত্মক সংকট সৃষ্টি করবে। তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন, “আওয়ামী লীগকে ফেরাতে হলে আমাদের লাশের উপর দিয়ে ফেরাতে হবে,” অর্থাৎ যারা দেশকে ক্ষতির মুখে ফেলে দিবে, তাদেরই দায়ভার নেওয়া হবে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে নাগরিক পার্টির নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ইস্যুতে এক দীর্ঘ পোস্ট প্রকাশ করেন। পোস্টে তিনি বলেন, “রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ” নামে নতুন এক ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা চলছে – যা পুরোপুরি ভারতের হাতে সাজানো। তার মতে, সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরিন শারমিন, তাপস সহ একাধিক ব্যক্তিকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমিসহ আরও দুইজনের কাছে ক্যান্টনমেন্ট থেকে এই পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয় ১১ মার্চ দুপুর আড়াইটায়। আমাদেরকে প্রস্তাব দেওয়া হয় আসন সমঝোতার বিনিময়ে আমরা যেন এই প্রস্তাব মেনে নিই। আমাদের বলা হয়- ইতোমধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলকেও এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তারা শর্তসাপেক্ষে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনে রাজি হয়েছে। একটি বিরোধী দল থাকার চেয়ে একটি দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধী দল থাকা না-কি ভালো।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ফলশ্রুতিতে আপনি দেখবেন গত দুইদিন মিডিয়াতে আওয়ামী লীগের পক্ষে একাধিক রাজনীতিবিদ বয়ান দেওয়া শুরু করেছে। আমাদের আরও বলা হয় যে, রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ যাদের দিয়ে করা হবে, তারা এপ্রিল-মে থেকে শেখ পরিবারের অপরাধ স্বীকার করবে, হাসিনাকে অস্বীকার করবে এবং তারা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ করবে এমন প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হবে। এই প্রস্তাব দেওয়া হলে আমরা তৎক্ষণাৎ এর বিরোধিতা করি এবং জানাই যে, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে কাজ করুন।
এর উত্তরে আমাদের বলা হয়, ‘আওয়ামী লীগকে ফিরতে কোন ধরনের বাধা দিলে দেশে যে সংকট সৃষ্টি হবে, তার দায়ভার আমাদের নিতে হবে এবং আওয়ামী লীগ মাস্ট কাম ব্যাক। আলোচনার এক পর্যায় বলি, যেই দল এখনো ক্ষমা চায় নাই, অপরাধ স্বীকার করে নাই, সেই দলকে আপনারা কিভাবে ক্ষমা করে দিবেন! অপরপক্ষ থেকে রেগে গিয়ে উত্তর আসে, ‘ইউ পিপল নো নাথিং। ইউ ল্যাক উইজডোম অ্যান্ড এক্সপিরিয়েন্স। উই আর ইন দিজ সার্ভিস ফর এটলিস্ট ফোর্টি ইয়ার্স। তোমার বয়সের থেকে বেশি। তাছাড়া আওয়ামী লীগ ছাড়া `ইনক্লুসিভ` ইলেকশন হবে না।’
তিনি বলেন, ‘উত্তরে বলি, আওয়ামী লীগের সাথে কোনো ইনক্লুসিভিটি হতে পারে না। আওয়ামী লীগকে ফেরাতে হলে আমাদের লাশের উপর দিয়ে ফেরাতে হবে। আওয়ামী লীগ ফেরানোর চেষ্টা করা হলে যে সংকট তৈরি হবে, তার দায়ভার আপনাদের নিতে হবে।’
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, জুলাই আন্দোলনের সময়ও আমাদের দিয়ে অনেককিছু করানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কখনো এজেন্সি কখনো বা ক্যান্টনমেন্ট থেকে নানা ধরণের প্রেসক্রিপশন গ্রহণ করতে চাপ দেয়া হয়েছে। আমরা ওসব চাপে নতি স্বীকার না করে আপনাদের তথা জনগণের উপরেই আস্থা রেখেছি। আপনাদের সাথে নিয়েই হাসিনার চূড়ান্ত পতন ঘটিয়েছি।
আজকেও ক্যান্টনমেন্টের চাপকে অস্বীকার করে আমি আবারও আপনাদের উপরেই ভরসা রাখতে চাই। এ পোস্ট দেওয়ার পর আমার কী হবে আমি জানি না। নানামুখী প্রেশারে আমাকে হয়তো পড়তে হবে। হয়তো বিপদেও পড়তে হতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে কোন ধরণের আপোষ করার সুযোগ নাই।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই সমন্বয়ক বলেন, ৫ আগস্টের পরের বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কামব্যাকের আর কোন সুযোগ নাই বরং আওয়ামী লীগকে অবশ্যই নিষিদ্ধ হতেই হবে। তিনি একটি ভিডিওর ক্যাপশনে ‘বুকে পাথর চাপা দিয়ে মেনে নেওয়া সিদ্ধান্ত’ পোস্ট করেছেন । যে ভিডিওতে কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
ভিডিওতে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন,‘সেনা প্রধানের দিক থেকে মূল ভেটো ছিল, ড. মুহাম্মদ ইউনূস কেন? কেন অন্য কোনো ব্যক্তি নয়? ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নামে মামলা আছে। তিনি একজন কনভিক্টেড ব্যক্তি। একজন কনভিক্টেড ব্যক্তি কিভাবে একটা দেশের প্রধান উপদেষ্টা হতে পারেন। আওয়ামী লীগ একজন লোককে একেবারেই দেখতে পারছে না।
এছাড়া বাংলাদেশে ৩০-৪০ শতাংশ ব্যক্তি আওয়ামী লীগ সাপোর্ট করে। এই ৩০-৪০ শতাংশ ব্যক্তির বিরুদ্ধে গিয়ে একজন ব্যক্তিকে প্রধান উপদেষ্টা করা উচিত? সেনাপ্রধান লাস্ট আমাদেরকে বলেছিলেন যে আমি বুকে পাথর চাপা দিয়ে এই সিদ্ধান্তটা মেনে নিচ্ছি।’
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আওয়ামীলীগ পুনর্বাসন ও সংশ্লিষ্ট ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতবিরোধ ও বিভাজন স্পষ্ট হয়েছে। এই বিতর্কের ফলাফল দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কাঠামো ও জননেতাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।
Leave a comment